একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - একুশের চেতনা/অমর একুশে ফেব্রুয়ারি

 ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসঅমর একুশে ফেব্রুয়ারি বা আট ফাল্গুন আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্তে রাঙা এ দিনটি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতিতে রাঙা এই দিন।
একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
প্রতিবছর বারবার ঘুরে আসে এই দিন। আমরা স্মরণ করি সেই বীর শহীদদের যারা প্রাণ দিয়েছেন মাতৃভাষার জন্য।

সূচনা

বাঙালি জাতির জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার দাবিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক,জব্বার সহ নাম না জানা আরও অনেকেই শহীদ হয়েছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়, সারা বিশ্বে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস

একুশে একটি ইতিহাস। একটি জাতির জাতীয় চেতনা জাগরণের ইতিহাস। একুশের ইতিহাস ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। সেই ইতিহাস বাংলাদেশে পাকিস্তানের কাইমী স্বার্থবাদী চক্রের উপনিবেশ স্থাপনের ঘৃণা ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট ইংরেজ বিদায়ের পর শুরু হল পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর শোষণ।

তৎকালীন পাকিস্তানের কর্ণধার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৭ সালের ২১ শে মার্চ জনসভায় ও ২৪ মার্চ কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে উর্দুকেই পাকিস্তান এর একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করলে প্রতিবাদে ঝড় উঠে। পরবর্তী তিন বছর পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস রূপে পালিত হয়।

১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি আবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন এক সভায় উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা বলে ঘোষণা করলে তার প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার সচেতন শিক্ষক ছাত্র, বুদ্ধিজীবী,জনতা পুনরায় আন্দোলন শুরু করে। ৪ ফেব্রুয়ারি সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করে। ১১ ফেব্রুয়ারি সারা প্রদেশে আন্দোলনের প্রস্তুতি দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশ ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণ আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটে। পাকিস্তানের জালিম সরকার প্রতিবাদ মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে শহীদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক ও আরো অনেকে। প্রদেশের বুকে লেখা হয় নতুন ইতিহাস শুরু হয়, রক্ত অক্ষরে লেখা ভাষা আন্দোলনের নতুন অধ্যায়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

এক সময় পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। একটি পশ্চিম,পাকিস্তান অপরটি পূর্ব পাকিস্তান। আমাদের বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল সেই পাকিস্তানের একটি অংশ অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। ১৯৪৮ সালের তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ ঢাকায় আসেন।

তিনি রমনা রেসকোর্সের এক জনসভায় ঘোষণা করেন- পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ ঘোষণায় বাংলার তরুণরা সেদিন জোর প্রতিবাদ জানায়। তারা বলেন, এটা কেউ মেনে নেবে না। কারণ, তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ আদিবাসী পূর্ব বাংলায়। তাদের মাতৃভাষা বাংলা। এর বিরুদ্ধে শুরু হয় সংগ্রাম।

ভাষা আন্দোলন

অর্থনৈতিক নিপীড়ন থেকে অনেক বড় নিপীড়ন হচ্ছে একটি জাতির ভাষা,সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের উপর নিপীড়ন,আর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী ঠিক সেটি শুরু করেছিল। পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালে আর্থিক ১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আলী জিন্নাহ ঢাকা এসে ঘোষনা করলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা তার প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ শুরু করে দিল।

আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পরল। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এবং আরো নাম না জানা অনেকে। তারপরেও সে আন্দোলনকে থামানো যায়নি, পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে হয়েছিল। যেখানে আমাদের ভাষা শহীদরা প্রাণ দিয়েছিলেন, সেখানে এখন আমাদের প্রিয় শহীদ মিনার।

আর একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। এখন সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য জাতির মাতৃভাষা দিবস। জেনারেলদের ষড়যন্ত্রে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ছিল সেনা শাসক আইয়ুব খানের একসময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো। হঠাৎ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো জেনারেলের ইয়াহিয়া খানকে লারকানায় পাখি শিকার করতে আমন্ত্রণ জানালো।

তাকে স্বীকার করতে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাথে যোগ দিল পাকিস্তানের বাঘা বাঘা জেনারেল। বাঙ্গালীদের হাতে কেমন করে ক্ষমতা না দেয়া যায় সে ষড়যন্ত্রে নীল নকশা সম্ভবত সেখানেই তৈরি হয়েছিল। ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চলতে থাকলেও জেনারেল ইয়াহিয়া খান সেটি বাইরে বুঝাতে চাইলো না। তাই সে ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করল ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হবে। সবাই তখন গভীর আগ্রহে সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

এর মাঝে ১৯৭১ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীদের ভালবাসা এবং মমতার শহীদ দিবস উদযাপিত হলো অন্য এক ধরনের উন্মোদনায়। শহীদ মিনারে সেদিন মানুষের ঢল নেমেছে তাদের বুকের ভিতর এর মাঝেই জন্ম নিতে শুরু করেছে স্বাধীনতার স্বপ্ন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙ্গালীদের সেই উন্মাদনা দেখে পাকিস্তান সেনা শাসকদের মনের ভেতরে যেটুকু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল সেটিও দূর হয়ে গেল।

জুলফিকার আলী ভুট্টো সেদিন সংখ্যালঘু দলে তার ক্ষমতার অংশ পাবার কথা নয় কিন্তু সে ক্ষমতার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠলো। জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে ঠিক দুদিন আগে মার্চ মাসের এক তারিখে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দিল। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের বুকের ভেতরে কুবের যে বারুদ জমা হয়েছিল সেখানে যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ স্পর্শ করল। সারাদেশে যে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটলো তার কোন তুলনা নেই।

একুশ সৃষ্টির ইতিহাস

কোন জাতি যখন পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ থাকে তখন তারা হয় অপর কর্তৃক নির্যাতিত নিষ্পেষিত এবং নানা ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিতাড়িত হলে ভারত ও পাকিস্তান নামে স্বাধীনতা অর্জন করে দুটো দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ প্রয়োজনীয়তা শৃঙ্খলেই আবদ্ধই থাকে। ফলে পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতে শুরু করে।

তারা পরিশেষে বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নেবার জন্য চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে। কিন্তু সমস্ত চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে ফিরিয়ে দিয়ে যায় বাংলা ভাষাকে। রক্তের বিনিময়ে বাঙালির মাতৃভাষার অস্তিত্ব দৃঢ় হয়। সৃষ্টি হয় করুণঘণ স্মৃতিময় এক আলেখ্য। সেই আলোকেই আজ সুরে ছন্দে, ভাব ভঙ্গিমায়, সাহিত্য সংস্কৃতিতে অমর হয়ে রয়েছে।

একুশ ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য

একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই বাংলাদেশের মানুষ আত্ম সচেতন হয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একুশের প্রেরণা হতেই ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। বস্তুত মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার বুকে রক্ত তৈরি হয়েছিল একটি রক্ত সরোবর। কালক্রমে এ রক্ত সরোবরে সৃষ্টি হয় একটি নদী যার নাম বাংলাদেশী জাতীয়তা। লাখো শহীদদের রক্তে রাঙা হয়ে উদিত হলো নতুন সূর্য স্বাধীন বাংলাদেশ।

শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের মাতৃভাষা

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হলে তা সহজে মানুষের হৃদয় জুড়ে থাকতে পারে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষণীয় বিষয়ের আনন্দ খুঁজে পায়। মাতৃভাষার মাধ্যমে গাথুনিটা খুব মজবুত করে দিতে পারলে যে কোন ভাষায় শিক্ষার্থী অতি সহজে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে। কঠোর সাধনা করেও যে ক্ষেত্রে অন্য ভাষায় পুরোপুরি জ্ঞান লাভ করা যায় না সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রতি সামান্য আকর্ষণ ও স্পৃহা থাকলে সেটা সহজে হৃদয় অঙ্গন করা যায়।

দেশজুড়ে শিক্ষা হীনতার গাঢ় অন্ধকার বিদূরিত করার একমাত্র উপায় শিক্ষাকে সহজলভ্য করা। মাতৃভাষার ভেতরে শিক্ষা লাভ এবং চিন্তার আদর্শ আদান-প্রদানের কতগুলো সাধারণ সুবিধা ব্যতীত একটা কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন প্রত্যেক দেশে সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি বিশেষ রূপ, দেশের মনীষী বৃন্দের চিন্তাধারার বিশেষ প্রকাশ মাতৃভাষার ভেতর দিয়েই সর্বৎকৃষ্টভাবে হতে পারে।

সেজন্য মাতৃভাষার ভেতর দিয়ে যদি দেশের মনীষী বৃন্দ তাদের চিন্তার ফসল গ্রন্থাকারে সঞ্চয় করেন, তবে তা সহজে ও স্বাভাবিক ভাবে দেশের বিদ্যার্থীদের অন্তর স্পর্শ করতে পারে।

শহীদ মিনার

অবশেষে পাকিস্তানি শাসকবর্গ বাঙালির কাছে নত শিকার করতে বাধ্য হয়। বাংলা এদেশের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করলো। শহীদ স্মরণে গড়ে উঠলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। একুশের চেতনা জাতীয় জীবনের সর্বত্র অভিনাশী প্রস্তাব বিস্তার করে আছে। প্রতিবছর ভাব গম্ভীর পরিবেশে একুশে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে মহান শহীদ দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।

এই দিনে শহীদ মিনারে পুষ্পার্পণ এর মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের মহা স্মৃতিকে স্মরণ করা হয়। এই দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ সারাদেশের শহীদ মিনারে ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে শহীদদের স্মরণে তৈরি হয়েছে শহীদ মিনার। ঠিক এ জায়গাতেই বরকত শহীদ হন। এ শহীদ মিনার আজ আমাদের সব আন্দোলনের প্রতীক।

এ মিনার আজ আমাদের অহংকার,আমাদের গৌরব। এই দিনে শোক বিহ্বল কন্ঠে সর্বত্র অনুরণিত হয়- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। মহান একুশের স্মৃতি ও চেতনার উজ্জীবনে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন আলোচনা, সমাবেশ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। প্রতিবছর একুশের আবর্তনে বাঙালি জাতি আলোকিত হয় নবচেতনার অভিনয় গৌরবে-

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি।
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি।

একুশের গুরুত্ব

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গোটা বিশ্বের ইতিহাসে এই দৃষ্টান্ত বিরল। একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে শুধু তার মাতৃভাষার কথা বলার অধিকারটুকুই দেয়নি পাশাপাশি তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে জাতীয়তাবাদী চেতনায়। ৫২র ভাষা আন্দোলন নিয়ে ধারাবাহিকতায়,৬২ এর ছাত্র আন্দোলন,৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন এর গণ আন্দোলন,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং রক্ত উজ্জ্বল স্বাধীনতা।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ

এখানে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো এর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭ টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহীদদের স্মৃতিতে সারা বিশ্বের স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১২৮ টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে দিবস উদযাপিত হয়।

একুশের চেতনায় সাহিত্য

একুশ বাংলাদেশের সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিস্তার লাভ করে আছে। মূলত ভাষা আন্দোলনই হয়েছিল আমরা যে ভাষায় কথা বলি, ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি, সাহিত্য চর্চা করি এবং যে ভাষায় আমাদের সংস্কৃতি প্রকাশ পায় সেই ভাষা নিয়ে। তাই আমাদের দেশের সাহিত্যে ২১ কে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য গান গল্প কবিতা উপন্যাস নাটক ইত্যাদি।

একুশের উপন্যাস

এদেশের সাহিত্য ভান্ডারে ২১ কে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি সারা জাগানো উপন্যাস রয়েছে সেগুলোর মধ্যে জহির রায়হান রচিত আরেক ফাগুন শওকত, সেলিনা হোসেনের নিরন্তর ঘন্টাধনী এবং যাপিত জীবন। এসব উপন্যাস যুগ যুগ ধরে বাঙালির চেতনায় অগ্রে অবস্থান করবে।

উপসংহার

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়ে বিশ্বের স্থান করে নিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আমাদের চিন্তা ও চেতনায় একীভূত একটি দিন। এদিন শুধু মাত্র ক্যালেন্ডারের একটি নির্দিষ্ট তারিখ নয়। এদিন বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি চির প্রদীপ্ত আলোকবর্তিকা। একুশে ফেব্রুয়ারি অমর ও অবিস্মরণীয়। আমরা এ দিনটিকে কোনদিন ভুলবো না-ভুলতে পারবো না।

লেখকের মতামত

আমরা দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসবো। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো। আশা করি, উক্ত মাতৃভাষা দিবস বিষয়ক সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url