কোন কোন শাক-সবজি খেলে এলার্জি হয়
যে সব খাবার খেলে শীতকালে সুস্থ থাকবেনকোন কোন শাক-সবজি খেলে এলার্জি হয় সেই বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেল। খাদ্যে এলার্জি খাদ্য থেকে এলার্জি এটি অস্বাভাবিক। এটি সাধারণত ইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এলার্জির লক্ষণগুলো ছোট থেকে বড় হতে পারে। এলার্জি সমস্যা রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে অনুভূত হয়।
![]() |
কোন কোন শাক-সবজি খেলে এলার্জি হয় তা জেনে নিন। |
ভূমিকা
কমবেশি সবার শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। মানবদেহে ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে। এই ব্যবস্থার গোলযোগ দেখা দিলে এলার্জির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বিভিন্ন শাকসবজি খাওয়ার ফলে এলার্জির সংক্রমণ ঘটে থাকে। সাধারণত আজকের আর্টিকেলে কোন কোন শাক-সবজি খেলে এলার্জি হয় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
কলমি শাক থেকে কি এলার্জি হয়?
কলমি শাকে সামান্য কিছু পরিমাণ এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের শরীরে এলার্জির পরিমাণ বেশি। তাদের কলমি শাক এড়িয়ে চলা উচিত। যাদের আগে থেকে এলার্জি জনিত সমস্যা নেই তাদের জন্য কলমি শাক খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার।
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়?
কচুতে রয়েছে আয়রন। যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। মানবদেহের ঠিক রাখে অক্সিজেন সরবরাহ। এছাড়াও রয়েছে প্রোটিন,শর্করা, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। কচু শাকের জাত অনুযায়ী বেশি পরিমাণ এলার্জি হয়ে থাকে। তবে কিছু জাতের কচুশাকে পাতার উপরে কালো এক ধরনের দাগ থাকে। এই জাতের কচু শাক খাওয়া উচিত নয়। যেসব কচু শাকের উপরে কালো যে অংশ থাকে না এই শাকগুলো বেশ সুস্বাদু ও অ্যালার্জি মুক্ত হয়ে থাকে।
কচু শাকের কিছু গুনাগুনের কথা না বললেই নয়, অনেক সময় দেখা যায় উল কচুর রসও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পান করানো হয়। এই কচু শাক আবার দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। কচু শাকের ভিটামিন কোষের হাড় গঠনে সহায়তা করে। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আশ হওয়ায় এই শাক পরিপাক ক্রিয়াকে পুরোপুরি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এই শাকের আরও একটি উপকারিতা হলো এতে অনেক পরিমাণ ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ রয়েছে।
পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয়?
পুঁইশাকে অনেক পরিমাণ ফাইবার রয়েছে।এই শাক খেলে অনেক সময় পেটে গ্যাস ফোলা ভাব সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। সবুজ শাক সবজি তে বেশ পরিমান হিস্টামিন থাকে। হিস্টামিন হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যা শরীরের কিছু কোষে পাওয়া যায় যা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এর জন্য এল্যার্জি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। পুঁইশাকে অন্যান্য শাকের মতো অনেক ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,লৌহ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
তবে ক্যালরির পরিমাণ কিছু পরিমাণ কম রয়েছে। তবে আমিষের পরিমাণ সামান্য পরিমাণে বেশি রয়েছে। আমাদের দেশের প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে-শাকের মধ্যে পুঁই আর মাছের মধ্যে রুই। পুঁইশাক দিয়ে বেশ সুস্বাদু ও মজাদার তরকারি রান্না করা হয়। পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান রয়েছে। যারা কিডনি বা পিত্তথলির রোগে ভুগছেন বা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের পুঁইশাক খাওয়া উচিত নয়।
নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস ও হেমোরোয়েড হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুবই কম। যারা মাথা ব্যথায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পুঁইশাক খেলে দ্রুত উপকার পেতে পারেন।
বেগুন খেলে কি অ্যালার্জি হয়?
বেগুন বেশ সুস্বাদু এক ধরনের সবজি। যাদের এলার্জি অথবা অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন তারা বেগুন খাওয়া হতে দূরে থাকুন। বেগুন খেলে গলার ভেতরে ও বাইরে অস্বস্তি হওয়া ও চর্ম রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঢেঁড়স খেলে কি এলার্জি হয়?
খাদ্যে যাদের অ্যালার্জি আছে।তাদের ঢেঁড়স খেলে অ্যালার্জির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। সাধারণত ঢেঁড়সে সবার অ্যালার্জি দেখা দেয় না। ঢেঁড়স অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এক ধরনের সবজি। ঢেঁড়স দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। ঢেঁড়স আয়রন সমৃদ্ধ এক ধরনের সবজি। ঢেঁড়সে ভিটামিন এ রয়েছে। এই ভিটামিন এ থাকার কারণে চর্মরোগ দূর করে এবং স্বাস্থ্যের কোলাজেন বাড়াতে সাহায্য করে। ঢেঁড়স ভিটামিন সি রয়েছে।
এই ভিটামিন সি থাকার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সে অধিক মাত্রায় ফোলেট থাকায় গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ঢেঁড়সে পটাশিয়াম রয়েছে যার হৃদ রোগের জন্য অধিক তোর উপযোগী। ঢেঁড়স এমন এক ধরনের সবজি যা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ধারণ করে এবং দাঁত ভালো রাখতে সহায়তা করে। ঢেঁড়স কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমায় যা হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সহায়তা করে। ওজন কমানোর জন্য ঢেঁড়স বেশ উপযোগী।
কোন কোন খাবার গুলো খেলে আমাদের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা অধিক পরিমাণে বাড়ে?
ইলিশ মাছ খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ইলিশ মাছের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, আয়োডিন, জিংক, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে। ইলিশ মাছের এই আয়োডিন থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এই ইলিশ মাছ খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ইলিশ মাছ থেকে যে মিনারেল,ফসফরাস ও আয়োডিন পাওয়া যায়। যা আমাদের হাড় গঠনে সহায়তা করে। ইলিশ মাছ স্নায়ু কোষ কে সুরক্ষিত রাখে।
ইলিশ মাছ যেহেতু সামুদ্রিক মাছ। আর সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন থাকে। এই হিস্টামিন নামক পদার্থ ইলিশ মাছের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এজন্যই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা ইলিশ মাছ হতে বিরত থাকুন। চিংড়ি মাছেও প্রচুর পরিমাণে এলার্জি রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম। যখন খাবারে থাকা কিছু ক্ষতিকর প্রোটিনকে ভুলবশত ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে।
তখন এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। চিংড়ি মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ। চিংড়ির প্রতি একটি ইমউনো লজিক্যাল প্রতিক্রিয়া যা চিংড়ি খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটতে পারে। কিছু কিছু মানুষের ফুড অ্যালার্জি থাকার কারণে ও চিংড়ি মাছ খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাদের উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের চিংড়ি খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। চিংড়ি মাছ সামুদ্রিক মাছ হলেও এটি পুকুরে ও চাষাবাদ করা হয়।
গরুর মাংসে এলার্জি রয়েছে। যাদের মাংসে এলার্জি আছে তারা প্রথমবার মাংস খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এদের ক্ষতিকর পদার্থ বলে দাবি করে। যাদের গরুর মাংস এলার্জি আছে। তারা গরুর মাংস খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁসের মাংস খেলেও অনেক সময় এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা হয়ে থাকে।
- মসুর ডালেও অনেক সময় এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কি কি কারণে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
অনেকের ঘরে ধুলাবালি জমানো থাকলে হাঁপানি এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘরের ধুলোবালিতে এক ধরনের মাইট নামক পদার্থ থাকে যা অ্যালার্জি সৃষ্টির প্রধান কারণ। যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তারা ধুলোবালি থেকে এড়িয়ে থাকতে হবে। ঘরের ধুলোবালি পরিষ্কার করার সময় মুখে প্রয়োজনে মাস্ক পড়তে হবে। দূষিত বাতাস, কলকারখানার ধোঁয়া এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন খাবার কিংবা অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে সরে রাখতে হবে।
যে খাবারগুলোতে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা নেই?
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যে খাবারগুলো রয়েছে কাজুবাদাম,আখরোট এবং সূর্যমুখীর বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। এলার্জি সমস্যা দূর করে। যেসব: খাবার অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে যেমন আপেল, কমলালেবু ,বাদামী, ফুলকপি, বাঁধাকপি,পেঁয়াজ ইত্যাদি। এসব খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যাতে ন্যাচারাল অ্যান্টিভাইরাল ও আন্টি প্রদাহ কেমিক্যাল থাকায় এলার্জি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
দই,টক দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় শরীরের তন্ত্রকে উন্নত করে এলার্জিকে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার মাছ,বাদাম, আনারস (ব্রোমালিনযুক্ত) এলার্জি কমানোর পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক, যাদের খাদ্যে এলার্জি আছে তারা এলার্জি যুক্ত খাবার হতে দূরে থাকুন। বেশি করে পানি পান করুন। নিয়মিত হাটাহাটি করুন। আশা করি, উপরোক্ত পোস্ট আপনার ভালো লাগবে। আর্টেকলটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url