ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
পেটের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া সহজ উপায়ঘন ঘন জ্বর হওয়া আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। হঠাৎ করে জ্বর হওয়ার অভিজ্ঞতা কম বেশি আমাদের সবারই রয়েছে। ঘন ঘন জ্বর হওয়ার জন্য আমরা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এটি আবহাওয়া পরিবর্তন, ভাইরাসের সংক্রমণ এবং হঠাৎ বৃষ্টিতে ভেজা সব বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের বিভিন্ন সময় আমরা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি।
![]() |
ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন। |
শীতের সময় ঠান্ডা বাতাস ও শিশিরে ভিজলে আমাদের জ্বর আসে। বাংলাদেশের সাধারণত জ্বর হলে আমরা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে ঘরের চিকিৎসা নিয়ে থাকি। কিন্তু চিকিৎসকের মতে কোন কোন সময় চড় মারাত্মক প্রাণ খেতে উঠতে পারে। সেজন্য আমাদের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরী।
ভূমিকা
জ্বর আমাদের জন্য অতি পরিচিত একটি অসুস্থতা। সাধারণত জ্বর আসলে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্যারাসিটামল খেয়ে সেটা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু জ্বর যদি কয়েকদিন পর পরই জ্বর হয় তখন আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে যায়। কারণ তখন ঘরোয়া পদ্ধতিতে সুস্থ হওয়া যায় না। তখন আমাদের করণীয় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
যখন কোন ভাইরাস শরীরটা আক্রমণ করে বা কোন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার চেষ্টা করে তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেই ভাইরাস বা জীবনের সাথে লড়াই করার জন্য শরীরের তাপমাত্রা বেরিয়ে দেয়, শরীরের এই বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রাকে আমরা জ্বর বলে থাকি। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ঘন ঘন জ্বর থেকে বিরোধ।
ঘন ঘন জ্বর আসার কারণ কি
ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের জ্বর জ্বর লাগে। কারণ ঋতু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়, সেজন্য অনেকের জ্বর আসে। ঋতু পরিবর্তন ছাড়াও এমন লাগতে পারে, আমাদের কোন রোগ হওয়ার আগে জ্বর চলে আসে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর জ্বর বোধ হয়, শরীর ম্যাজম্যাজ করে ও শরীরে অস্বস্তি লাগে। এ অবস্থা কে বলে লো-গ্রেড ফিভার বা নিম্নমাত্রার জ্বর। বার বার জ্বর আসার কারণ গুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ-
১. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস
আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ঘন ঘন জ্বর হয়। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুব সহজে যেকোনো রোগ আক্রমণ করতে পারে। তাই বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগ তাদের আক্রমণ বেশি করে ফলে তাদের ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে।
২. নিউমোনিয়া
শরীরে বেশি ঠান্ডা লাগার ফলে নিউমোনিয়া হয়। অনেক সময় হালকা নিউমোনিয়াম হলে রোগী বুঝতে পারেনা তার নিউমোনিয়া হয়েছে। নিউমোনিয়া হলে আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, তা না হলে এটি বড় ক্ষতি করতে পারে। নিউমোনিয়া পাওয়ার ফলে বারবার জ্বর চলে আসে। নিউমোনিয়ার সঠিক ভাবে চিকিৎসা না করা পর্যন্ত বার বার জ্বর আসবে এবং অসুস্থতায় ভুগবেন।
৩. এইচ আই ভি ও ক্যান্সার
ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির লক্ষণ হিসেবে বারবার জ্বর আসতে পারে। কারণ ক্যান্সার রোগীদেরও ঘন ঘন জ্বর থাকে এবং এইডস আক্রান্ত রোগীদেরও বার বার জ্বর হয়ে থাকে। ক্যান্সার ও এইচআইভির মত মরণব্যাধি অন্যতম লক্ষণ বার বার জ্বর আসা।
৪. লাঞ্চে বা ফুসফুসে পানি জমা
আমাদের বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। যক্ষা, নিউমোনিয়া, কিডনির জটিলতা এমনকি অপুষ্টির জন্য ফুসফুসে পানি জমতে পারে। এই ফুসফুসে পানি জমলে ঘন ঘন জ্বর আসে।
৫. ধূমপান
ধূমপান ফলে ফুসফুসে ইনফেকশন হতে পারে। আর এই ফুসফুসের ইনফেকশনের কারণে বার বার জ্বর হতে পারে। সেই জন্য বলা যায় ক্রমাগত ধূমপান ঘন ঘন জ্বর হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
৬. কিডনি, লিভার ও হার্ট
কিডনির লিভার ও হার্টের বিভিন্ন রোগের জন্য রোগীর ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। জ্বর অনেক জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। উপরোক্ত জটিল রোগের চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘন ঘন জ্বর হয়
ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার শরীরে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। কারণ ভিটামিন ডি এর মধ্যে এমন প্রকার পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরে দৈনন্দিন চলাফেরা বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। কারণ ভিটামিন ডি এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা আমাদের শরীরের শারীরিক চাহিদা পূরণ করে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে যে সকল রোগের লক্ষণ রয়েছে সেগুলো যদি আমাদের শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে আমাদের বিভিন্ন রকম রোগ হতে পারে। সেজন্য আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
মহিলাদের ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে তারা জানেন না যে তাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। ভিটামিন ডি এর অভাবে যেসব ঘাটতি রয়েছে সেগুলো পূরণ না হলে, শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ চিহ্নিত হয়। তাহলে এর জন্য আপনাকে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। ভিটামিন ডি এর অভাবে যেহেতু ঘন ঘন জ্বর হতে পারে সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরী।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি ক্যান্সার রোগীদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে, তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে। আবার বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য খুব জরুরি ভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে, তাহলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি পায়। হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় না এবং ঘন ঘন জ্বর হয়ে থাকে। আর এই কারণে শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক চাপের হতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন তখন ঘুম হবে না বা কিছুক্ষন ঘুমানোর পর ঘুমের মাঝখানে ঘুম ভেঙ্গে যাবে। ভিটামিন ডি এর ঘাটতিতে আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে।
যার কারণে আপনার সঠিক ভাবে ঘুম হবে না এবং ঘন ঘন জ্বর হতে পারে। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ ভিটামিন ডি এর অভাবের ফলে আপনার শরীরে হার সমূহ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যার ফলে অল্প আঘাতে আপনার শরীরের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দুর্বল হাড় এর ক্ষয় হয়ে গেলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে বেশি করে খেতে হবে।
আবার যখনই ঘন ঘন জ্বর হবে, তখন ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আপনাকে যথা সম্ভব পূরণ করতে হবে। এছাড়াও যখন আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হবে তখন শ্বাসকষ্টের মতো বড় রোগ দেখা দিতে পারে। যখন আপনার শরীরে ভিটামিন ডি থাকবে, তখন যে কোন রোগকে সহজে সংক্রমণ করতে পারবেন এবং আপনার রোগমুক্ত থাকতে পারবেন।
ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়
উপরোক্ত আলোচনায় এতক্ষণ বুঝতে পারছেন, যে ঘন ঘন জ্বর হওয়া মোটেও শরীরে জন্য ঠিক না। ঘন ঘন জ্বর হলে প্রাথমিক চিকিৎসা অনুযায়ী আপনাকে বেশি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই ঘন ঘন জ্বর হওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। সেজন্য ঘন ঘন জ্বর হলে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে সবাইকে অবগত থাকা দরকার। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ-
- আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে শরীরে কোন প্রকার ভাইরাস অথবা রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত না হয়।
- ঘন ঘন জ্বরের কারণে আপনার শরীর ও আপনাকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে হবে।
- ঘন ঘন জ্বর থেকে বাঁচার জন্য ধূমপান ও সকল ধরনের মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতিদিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।
- পুষ্টিকর ও সুষম যুক্ত খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- তাছাড়া ঘন ঘন জ্বর হলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- আপনার শরীর দুর্বল হয়ে থাকলে ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করতে হবে বা ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
- ঘন ঘন জ্বর দেখা দিলে ভাইরাত জাতীয় বা জীবাণুযুক্ত রোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
- যে সকল অভ্যাসের কারণে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সে সকল অভ্যাস থেকে সব সময় বিরত থাকতে হবে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনা এতক্ষণে আপনি জানতে পারছেন ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ ও প্রতিকার। আর্টিকেলটি আপনার উপকৃত করে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও ঘন ঘন জ্বর হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url