১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়। এই মুক্তিযুদ্ধ শুরু একখণ্ড ভূমির অধিকার পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এক সাগর রক্ত বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ ছিল। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর আমরা ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতার লাল সূর্য।
![]() |
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনে নিন। |
ভূমিকা
বাঙালি আজ বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তার প্রকাশ কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এবং ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমরা লাভ করেছি মুক্তির স্বাদ। মহান মুক্তিযুদ্ধেই বাঙালি জাতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজ অর্জন করেছে তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকারের অনুষঙ্গ পরিচয় এর উৎস।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বপ্নের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে বীরত্ব ও আত্মদানের এক অনবদ্য নজির স্থাপন করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য,আমাদের চেতনা। এ ঐতিহ্য ও চেতনাকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব ইতিহাস
যেকোনো কিছু বর্ণনা করতে হলে সেটি একটু আগে থেকে বলতে হয়, তাই বাংলাদেশের ইতিহাস জানার জন্য একটু আগে গিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করা যেতে পারে। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে প্রায় ২০০ বছর শাসন- শোষণ করেছে। তাদের হাত থেকে স্বাধীনতার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে, জেল খেটেছে দ্বীপান্তরে গিয়েছে।
১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব এ ঠিক করা হয়েছিল ভারতবর্ষের যে অঞ্চলগুলোতে মুসলমান বেশি, সেরকম দুটি অঞ্চলকে নিয়ে দুটি দেশ এবং বাকি অঞ্চলটিকে নিয়ে আর একটি দেশ তৈরি করা হবে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যে এলাকার দুটিতে মুসলমানরা বেশি সেই এলাকা দুটি নিয়ে দুটি ভিন্ন দেশ না হয়ে পাকিস্তান নামে একটি দেশ এবং ১৫ আগস্ট বাকি অঞ্চলটিকে ভারত নামে অন্য একটি দেশে ভাগ করে দেওয়া হলো।
পাকিস্তান নামে পৃথিবীতে তখন অত্যন্ত বিচিত্র একটি দেশের নাম জন্ম হলো, যে দেশের দুটি অংশ দুই জায়গায়। এখন যেটি পাকিস্তান সেটির নাম পশ্চিম পাকিস্তান এবং এখন যেটি বাংলাদেশ তার নাম পূর্ব পাকিস্তান। মাঝখানে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্ব, এবং সেখানে রয়েছে ভিন্ন একটি দেশ-ভারত।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি
১৯৪৭ সালের স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষবৃক্ষের উপর ভিত্তি করে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্লজ্জ বৈষম্য নীতি প্রকাশ ঘটে যখন তারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। বাংলার মানুষ মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানেরা অকাতরে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর পদলেহী রাষ্ট্রীয় উর্দিদ্ধারী পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেয়।
ভাষাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অভূতপূর্ব জাতীয়তাবাদী চেতনার জন্ম হয়। প্রকৃতপক্ষে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শানিত করে তোলে।
মুক্তিযুদ্ধের পথ পরিক্রমা
ভাষা আন্দোলনের ফলে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটে তার আলোকেই জাতির মানুষ চক্ষুকে ভেসে উঠে শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন বৈষম্য নীতি। সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে গোটা জাতি প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জাতি পরিপূর্ণ স্বাধীনতার জন্য উন্মাতাল হয়ে ওঠে।
ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফার সূত্র ধরে জাতীয় জীবনে সশস্ত্র সংগ্রামের চেতনা পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। অবশেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচন এলো। নির্বাচনে জাতীয় দলকে যখন ক্ষমতা অর্পনে শাসকগোষ্ঠী গড়িমসি করতে লাগলো তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোনালেন অবসর নিয়ম ঘোষণা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যুগে যুগে
বাঙালি জাতির পরাধীন ছিল ঠিকই কিন্তু পরাধীনতাকে কখনো মেনে নেয়নি। যুগ যুগ ধরে তারা লড়াই করেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করেছে। ১৯৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে বাঙালির সংগ্রাম চেতনা অবিসরণীয়। ইংরেজদের বিদায়ের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের পতন হবার পর শাসক গোষ্ঠীর বৈষম্য নীতির কারণে বাংলার মুক্তিকামি মানুষ অনিবার্য যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল শ্রেণীর বাংলাদেশী মানুষের আদর্শ এবং নতুন দিনের পথপ্রদর্শক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজও মিশে আছে আমাদের জীবনে,আমাদের সাহিত্যে, সঙ্গীতে শিল্পকলায়, স্থাপত্য আর ভাস্কর্য শিল্পে। মিশে আছে আমাদের সংস্কৃতিতে। একে আমরা প্রতিবছর অনুভব করি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস,বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ইত্যাদি স্মরণীয় দিবসের মধ্য দিয়ে। বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছে আমাদের বিজয়ের দিন। সফলতা পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন
আমাদের নানা কর্মকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ এবং প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুজ্জল রাখার জন্য গড়ে তোলা হয় নানা ভাস্কর্য। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুজিবনগরের স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিস্তম্ভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলা, রোকেয়া হলের পূর্ব পাশে অবস্থিত ভাস্কর্য, গাজীপুরের চৌরাস্তায় নির্মিত ভাস্কর্য ইত্যাদিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। ঢাকার সেগুন বাগিচায় গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
বিভেদ, বৈষম্য ,শোষণ আর ষড়যন্ত্র
পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে শুধু যে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দূরত্ব তা নয়, মানুষগুলোর ভেতরেও ছিল বিশাল দূরত্ব। তাদের চেহারা, ভাষা, খাবার,পোশাক,সংস্কৃতি,ঐতিহ্য সবকিছু ছিল ভিন্ন শুধু একটি বিষয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষগুলোর মাঝে মিল ছিল সেটি হচ্ছে ধর্ম। এরকম বিচিত্র একটি দেশ হলে সেটি টিকিয়ে রাখার জন্য আলাদাভাবে একটু বেশি চেষ্টা করার কথা, কিন্তু পাকিস্তানের শাসকেরা সেই চেষ্টা করল না।
দেশভাগের সময় পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল দুই কোটি, পূর্ব পাকিস্তানের ছিল চার কোটি, কাজেই সহজ হিসেবে বলা যায় শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পুলিশ-মিলিটারি, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা সবকিছুতেই যদি একজন পশ্চিম পাকিস্তানের লোক থাকে, তাহলে সেখানে দুইজন পূর্ব পাকিস্তানের লোক থাকা উচিত। বাস্তবে হল ঠিক তার উল্টো, সবকিছুতেই পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগ ছিল শতকরা ৮০ থেকে ৯০ভাগ।
বাজেটের ৭৫% ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে, ২৫%ব্যয় হতো পূর্ব পাকিস্তানে, যদিও পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাজস্ব আয় ছিল বেশি, শতকরা ৬২ ভাগ। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল সেনাবাহিনীর সংখ্যা, পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যের সংখ্যা ছিল ২৫ গুন বেশি। জেনারেলদের ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ছিল সেনা শাসক আইয়ুব খানের এক সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো।
হঠাৎ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে লারকানাই তাকে শিকার করতে আক্রমণ জানালো। পাখি শিকার করতে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে যোগ দিলো পাকিস্তানি বাঘা বাঘা জেনারেল। বাঙ্গালীদের হাতে এমন করে ক্ষমতা না দেয়া যায় সেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা সম্ভবত সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল। ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চলতে থাকলেও জেনারেল ইয়াহিয়া খান সেটি বাইরে বুঝাতে চাইলো না। তাই সে ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করল ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হবে। সবাই তখন গভীর আগ্রহে দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙ্গালীদের উন্মাদনা দেখে পাকিস্তান শাসকদের মনের ভেতরে যেটুকু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল সেটুকুও দূর হয়ে গেল। জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিল সংখ্যালঘু দলে, তার ক্ষমতার অংশ পাওয়ার কথা নয়, কিন্তু সে ক্ষমতার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠলো। জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে ঠিক ২ দিন আগে ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দিল। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের বুকের ভেতর খুবের যে বারুদ জমা হয়েছিল, সেখানে যেন অগ্নি স্ফূলিঙ্গ স্পর্শ করল। সারা দেশে বিক্ষোভের যে বিস্ফোরণ ঘটলো তার কোন তুলনা নেই।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ আর প্রতিরোধ
ঢাকা শহরে পৃথিবীর একটি নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ২৭ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হলে শহরের ভয়ার্ত নারী-পুরুষ শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গ্রামের দিকে ছুটে যেতে লাগলো। জেনারেল টিক্কা খান ভেবেছিল সে ভাবে ঢাকা শহরকে দখল করেছে, সারা বাংলাদেশকে এপ্রিলের দশ তারিখের মাঝে দখল করে নেবে।
কিন্তু বাস্তবে সেটি হল সম্পূর্ণ ভিন্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে আসা বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, এই দেশের ছাত্র জনতা সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তার কোন তুলনা নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই সময়ে পাকিস্তান থেকে দুইটি ডিভিশন বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এছাড়াও পরবর্তী সময়ে অসংখ্য মিলিটারি বাহিনী আনা হয়, তার সাথে সাথে যুদ্ধ জাহাজে করে অস্ত্র আর গোলাবারুদ।
বিশাল অস্ত্র সম্ভার এবং বিমানবাহিনীর সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংলাদেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মে মাসের মাঝামাঝি তারা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বড় বড় শহর নিজেদের দখলে নিয়ে আসতে পারে। পাকিস্তান সরকার ১১ই এপ্রিল টিক্কা খানের পরিবর্তে জেনারেল নিয়াজিকে সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু করার জন্য গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে অনেক বেশি। মুক্তিযুদ্ধের করুন কাহিনী আর বিরক্ত গাঁথা দিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, উপন্যাস,নাটক, সংগীত, প্রবন্ধ এবং অসংখ্য কবিতা-ছড়া।
শওকত ওসমানের- দুই সৈনিক, সৈয়দ শামসুল হকের-নীলা দংশন, রাবেয়া খাতুনের-মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, আনোয়ার পাশার-রাইফেল রোটি আওরাত, রাজিয়া রহমানের-রক্তের অক্ষর, সেলিনা হোসেনের-হাঙর নদী গ্রেনেট, আল মাহমুদের-উপমহাদেশ, কাবিলের বোন, হুমায়ুন আহমদের-জোছনা ও জননীর গল্প, ইমদাদুল হক মিলনের-মহাযুদ্ধ, শিরিন মজিদের-অপু বিজয় দেখেনি, প্রভৃতি যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস।
শওকত ওসমানের-জন্ম যদি তব বঙ্গে গ্রন্থের সবগুলো গল্পই রচিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নির্বাচিত গল্প সংকলন। কল্যাণ মিত্রের-জল্লাদের দরবার নাটক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রবীণ এবং নবীন প্রায় সকল কবির হাতেই সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা। জন্ম হয়েছে সাহিত্যের নতুন স্রোতধারা।
একদিক থেকে যারা আগ্রহী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে পল্লীকবি জসীমউদ্দীন,সুফিয়া কামাল,আহসান হাবীব, সেকেন্দার আবু জাফর,শামসুর রহমান, জাহানারা আরজু,হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ,আল মাহমুদ,মোঃ মনিরুজ্জামান,সৈয়দ শামসুল হক,ফজল শাহাবুদ্দিন, মহাদেব সাহা, নিরমলেন্দু গুণ,আসাদ চৌধুরী,হুমায়ুন আজাদ, মুহাম্মদ নুরুলহুদা,আবিদ আজাদ, হেলাল হাফিজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জসীমউদ্দীনের- দগ্ধগ্রাম, আহসান হাবিবের-মার্চ, সিকান্দার আবু জাফরের-বাংলা ছাড়ো, আলাউদ্দিন আল আজাদের- মুক্তিযোদ্ধা, ফজল শাহাবুদ্দিনের-বাংলাদেশ একাত্তরে, মহাদেব সাহার-একজন মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি, আব্দুল মান্নান সৈয়দের- মুক্তিযুদ্ধ, হুমায়ুন আজাদের- মুক্তিবাহিনী জন্য প্রভৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে রচিত উল্লেখযোগ্য কবিতা।
সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মানুষে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার বদল, হত্যা আর রক্ত পাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, দেশি ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তৎপরতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজে সৃষ্ট হতাশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি।
যে আদর্শ উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তাদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে হাজার হাজার মা-বোন আমাদের সমাজ এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে এটি আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও দায়িত্ববোধ
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব উজ্জ্বল চেতনাকে সম্মুনত রাখতে প্রতিক্রিয়াশীলদের সম্পর্কে আমাদেরকে অধিকার সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ,শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সব বিরোধ ও বিভক্তির উর্ধ্বে থেকে দেশের অগ্রগতি ও জনগণের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। তাহলেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আমাদের যথাযথ ভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।
উপসংহার
বাঙালি বীরের জাতি। মুক্তি কামি বিপ্লবী বাঙালি জন মানুষে শৃংখল ভাঙ্গার চেতনা জাগ্রত হয়। আর তারই পথ ধরে বাঙালি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য। নিরস্ত্র বাঙালি অস্ত্র হাতে লোহার হেলমেট পড়া হানাদারদের দেখে ভীত হয়ে পিছপা হয়নি। বরং নরপিশাচদের শক্ত হাতে অস্ত্র ধরে অজস্র রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে পরাস্ত করে অর্জন করেছে স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমাদেরকে অর্জন করতে হবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা। তবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতা হবে গৌরবময়।
লেখকের মতামত
সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। তাদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা এই চিরচেনা বাংলাদেশকে। আশা করি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত এই রচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার উপকৃত হয়েছে। আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url