পেটের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া সহজ উপায়
যে সব খাবার খেলে শীতকালে সুস্থ থাকবেনপেট ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা, পেট ব্যথায় ভোগেন অনেকেই। কমবেশি সবারই খুব পরিচিত ও সাধারণ সমস্যা হচ্ছে পেটের ব্যথা। সুস্থ মানুষেরও হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। পেটে ব্যথা খুবই একটি যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার। এটি হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। খাবারে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং আরও অনেক কারণে পেট ব্যথা হতে পারে।
![]() |
পেটের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া সহজ উপায় সম্পর্কে জেনে নিন। |
মাঝে মাঝে বাইরের খাবার খাওয়া হয়েই যায়। খুব সর্তক থাকলেও এক-দু’দিন প্রিয় খাবার হয়তো একটু বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ কোনও ইঙ্গিত ছাড়া শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড পেট ব্যথা। পেট খারাপ, গা বমি ভাব বা অ্যাসিডিটির নানা রকম ওষুধ বা সমাধান রয়েছে। পেটে ব্যথার সে অর্থে কোনও সমাধান নেই। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে পেট ব্যাথা কমানো যায়।
ভূমিকা
কমবেশি সবারই খুব পরিচিত ও সাধারণ সমস্যা হচ্ছে পেটের ব্যথা। পেট ব্যথা হলে কোনও কিছু ভালো লাগে না, অসহ্য অস্বস্থি হতে থাকে। সংক্রমণ, প্রদাহ, অন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি কারণে অনেক সময় পেটে ব্যথা হয়। তবে বেশির ভাগ পেট ব্যথাই গুরুত্বর নয়, দ্রুত আসে আবার দ্রুত চলে যায়। কিন্তু আমরা আসলে জানি না পেট ব্যথা কমানোর উপায়। একটি সুন্দর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন ভালো স্বাস্থ্য। আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদের পেট ভালো রাখতে হবে।
কারণ শরীরের অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি পেটের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়। কারণ পেট খাদ্য গ্রহণ করে এবং শরীরে এনার্জি প্রদান করে। প্রায়ই মানুষের ভুলভাল খাওয়ার কারণে পেটে ব্যথা সহ ভিন্ন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
পেটে ব্যথা হওয়ার কারণ
প্রথমেই বলে নিই, বিভিন্ন কারণের জন্য পেটে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময়ে প্রচুর পরিমাণে জল খেলে পেটের সব বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় শরীরে থেকে। তাতেও পেটে ব্যথা থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। পেটে ব্যাথার সাধারণ কারণ গুলো হলোঃ-
- আলসার
- বমি
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মৃত্রনালীর সংক্রামণ
- আন্ত্রিক রোগ বিশেষ
- কিডনিতে পাথর
- অন্ত্রবৃদ্ধি
- অম্বল
- পেট ফুলে যাওয়া
এগুলা কারণে আমাদের পেটের ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে পেট ব্যথা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
১০ টি ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেট ব্যথা কমানোর উপায়
আমরা সবাই জানি যে, ব্যথানাশক বিভিন্ন ওষুধের অনেক ক্ষতিকারক দিক আছে। তাই খুব বেশি জরুরি না হলে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। পেট ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া উপায় বেছে নিলে ওষুধের ওপরে ভরসা কমে আসবে। এক্ষেত্রে আপনার পেটের ব্যথা নিরাময়ে বেছে নিতে পারেন প্রকৃতিক সমাধান। এখন চলুন জেনে নেই প্রাকৃতিক উপায়ে বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে পেটে ব্যথা কমানোর কৌশলগুলো।
১. আদা চা
পেট ব্যথা সারাতে অন্যতম ঘরোয়া উপায় হতে পারে আদা চা পান করা। প্রচীনকাল থেকেই ব্যথা কমাতে এবং বমি ভাব দূর করতে আদাকে প্রকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধী গুণ থাকায় এটি ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার ফলে পেটের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। পেটের ব্যথা কম করতে আপনি আদা সেবন করতে পারেন। তাই প্রকৃতিকভাবে পেটের ব্যথা কমাতে আদা কুঁচি করে অথবা চিবিয়ে খেতে পারেন।
২. লেবু চা
চায়ের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। পেট ব্যথা সারাতেও দারুণ কার্যকরী এই চা। লেবু চা তৈরির জন্য আপনার লাগবে তিন কাপ গরম পানি, এক চা চামচ চা পাতা, দুটি তুলসি পাতা ও কয়েক টুকরো লেবু। লেবু চা তৈরির জন্য প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর তাতে তুলসিপাতা থেতো করে দিয়ে দিন। ভালো করে ফুটিয়ে চা পাতা দিন। এরপর ছেঁকে নিয়ে লেবুর রস মেশান। এটি আপনাকে পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
৩. কলা ও আপেল
পেটে ব্যথা কমাতে আপনি কলা বা আপেল খেতে পারেন। কারন কলা বা আপেলে প্রচুল পরিমানে ফাইবার থাকে যা পেটে ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। আর এ কারণে এগুলো পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া এটি বমি ভাব ও ডায়রিয়াতেও উপকারী হিসেবে কাজ করে।
৪. পুদিনা পাতা
পেটে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে এটি অন্যতম। পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে এবং পেট খারাপের জন্য অনেক সহায়ক একটি প্রাকৃতিক সমাধাণ হচ্ছে পুদিনা পাতা। পেটে ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে পুদিনা পাতা খুবই ভাল কাজ করে। এটির প্রকৃতিক ব্যথানাশক বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই পেট ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধাণ হিসেবে চায়ের সঙ্গে বা চিবিয়ে পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
৫. টোস্ট
টোস্ট বিস্কুট বা ওভারকুক করা রুটি পেট ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে তেমন কোনো তেল থাকে না। এছাড়া টোস্ট বিস্কুটে তেমন কোন তেল থাকে না। আর এ ছাড়া একটু পোড়া রুটি বা টোস্ট বমি ভাব কমাতেও সহায়তা করে।
৬. হলুদ
হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। এটি প্রদাহ কমাতে কাজ করে; পরিপাক ভালো করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস বা দুই গ্লাস পানির মধ্যে হলুদ দিয়ে গরম করুন। দিনে দুইবার এটি পান করুন। এ ছাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট দিনে তিনবার খেতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. মৌরি চা
পেটে জ্বালা ভাব হলে তা কমাতে সাহায্য করতে পারে মৌরি। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সমান কার্যকরী। মৌরি বদহজমের পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিতে পারেন। মৌরিতে অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটের ব্যথা উপশমের পাশাপাশি গ্যাস থেকে রেহাই দেয়। মৌরি চা তৈরির জন্য প্রয়োজন হবে এক কাপ গরম পানি, এক চা চামচ চা পাতা, এ চা চামচ মৌরি ও দুটি তুলসি পাতা।
এরপর প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে মৌরি ও তুলসিপাতা দুটি থেঁতো করে দিতে হবে। এরপর তাতে চা পাতা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। চিনি ছাড়া খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন।
৮. হিটিং প্যাড
পেটের ব্যথা কমাতে হিডিং প্যাড খুবই ভাল কাজ করে। পেটের ব্যথা কমাতে পেটে হালকা গরম করার মতো হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। এটি যে কোনো ধররনের ক্রাম্পিং বা ব্যথা নিরাময়ে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি আপনার বমি বমি ভাব থাকলেও তা হলে যাবে। দ্রুত পেটের ব্যথা কমানোর এটি একটি কার্যকারী উপায়।
এর জন্য আপনি গরম পানির ব্যাগ বা বোতলে হালকা গরম পানি নিয়ে পেটে ধরে রাখলেই অনেকটা স্বস্তি পাবেন। তবে এট খুব বেশি সময় ও অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
৯. মসলা দই
আমাদের পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাজ করে দই। আপনি যদি ঘরে এই মসলা দই তৈরি করে খান তবে দইয়ে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া পেট তো ভালো রাখবেই, সেইসঙ্গে দূর করবে হজমের যাবতীয় সমস্যাও। তাই দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খেলে তা এই ভারসাম্য বজায় রেখে পেটে ব্যথা কম করতে পারে। তাই দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খেলে তা এই ভারসাম্য বজায় রেখে পেটে ব্যথা কম করতে পারে।
১০. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
পেটের সমস্যার সমাধানের জন্য এটি গুবই উপকারী একটি উপায়। পেটে ব্যথা কমাতে আপনি আপেল সাইডার ভিনিগার ঘরোয়া ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি পেটের গ্যাস এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এক কাপ উষ্ণ গরম জলে আপেল সাইডার ভিনিগার এবং মধু যোগ করে নিন। এবার হালকা গরম জল ধীরে ধীরে পান করুন। দিনে দুইবার ব্যবহার করলে উপকৃত হবেন।
লেখকের মতামত
সুপ্রিয় পাঠক, পেট ব্যথা সাধারণত আমাদের সবারই হয়ে থাকে। এটা মাঝে মাঝে হওয়ার কারণ আমরা আজেবাজে জিনিস খেয়ে ফেলি। যার জন্য বদহজম হয় এবং পেট ব্যাথা সৃষ্টি হয়ে থাকে। সেজন্য আমাদের সতর্কতার সহিতে খাবার খেতে হবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার উপকৃত হয়েছে। আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। যাতে তারা এই বিষয়টি জানে এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধান করতে পারেন। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url