গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনগরুর দুধ দেখতে অত্যন্ত পুষ্টিকর পাইনিও যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে এটি ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, যা শক্তিশালী হাড় এবং দাঁতের জন্য অপরিহার্য। দুধ মানুষের একটি প্রধান ক্ষেত্রে হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কৃষিজাত পণ্য হিসেবে, খামারের পশু হতে গর্ভাবস্থার পর গবাদি পশু থেকে দুধ দোয়ানো হয়।
![]() |
গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন |
২০১১ সালে দুগ্ধ খামারে প্রায় 26 কোটি গাভী থেকে ৭৩ কোটি টন দুধ উৎপাদন হয়েছিল। ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী এবং সামান্য ননী ছাড়া দুধ ও গুঁড়া দুধ রপ্তানি কারি দেশ হিসেবে পরিচিত রয়েছে। গরুর দুধ অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টিগুণ ভরপুর যা সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। ক্যালসিয়াম থেকে প্রোটিন পর্যন্ত এই দুগ্ধ জাত পণ্যটির অফার করার মতন অনেক কিছু রয়েছে। গরুর দুধ নিয়মিত পান করার সাথে জড়িত অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে।
ভূমিকা
শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ সবারই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত। কারণ দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের উৎস যা ছোট-বড় সবার জন্য উপকারী। দুধে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঁচা দুধের পুষ্টির পরিমাণ বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন হল তাতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আবার গুরুত্ব তুলে সামান্য অম্লজাতীয়।
দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-১২ আছে, যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই ভালো। দুধ শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। আজকের আর্টিকেলে দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
গরুর দুধের পুষ্টির উপাদান
প্রথমে জেনে নেই, গরুর দুধের পুষ্টির উপাদান গুলো। আমাদের প্রতিদিনের খাবার গুলোর মধ্যে দুধ সবচাইতে বেশি উপকারী। দুধের পুষ্টি উপাদান গুলোর সম্পর্কে নিচে বলা হলোঃ-
- পানি রয়েছে ৮৭.৭ গ্রাম।
- খাদ্য শক্তি ৬৪ কিলোক্যালরি বিদ্যমান।
- আমিষের পরিমাণ ৩.৩ গ্রাম।
- এয়াশ আছে ০.৭ গ্রাম।
- ফ্যাট ৩.৬ গ্রাম পরিমাণ আছে।
- কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১১ মিলিগ্রাম।
- ১৪৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে।
- ভিটামিন এ আছে ১৪০ আই ইউ।
- সোডিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম।
- ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ ১০ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ১৪৩ মিলিগ্রাম রয়েছে।
গরুর দুধের উপকারিতা
ক্যালসিয়াম
গরুর দুধ ধাত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। দুধে থাকা ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গড়ন দৃঢ় হয়ে থাকে। প্রতিদিন দুধপান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মত সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। এই জন্য প্রতিদিন এই গ্লাস দুধ পান করা আবশ্যক।
কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এবং দুধ জাতীয় খাবারে তেমন এলার্জি না থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এতে শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বিরত রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। ধুতে থাকা ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত আমাদের দুধ পান করা উচিত।
ক্যান্সারে ঝুঁকে কমায়
দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের যুগে কমাতে সাহায্য করে। তাই দুধ নিহিত খাওয়া খুবই শরীরের জন্য উপকারী।
হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করে
গরুর দুধ ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীর সুস্থ হাড়কে শক্তিশালী ও বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এতে ভিটামিন ডি রয়েছে, যা ক্যালসিয়াম শোষণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং অস্টিওপোরাসিস হওয়ার ঝুঁকে কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেলে আমাদের হাড় মজবুত ও শক্তিশালী থাকে। এজন্য শিশুদের প্রতিদিন দুধ খাওয়াতে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবারই দুধ খাওয়া উচিত কারণ দুধের উপকারিতা রয়েছে অনেক। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি ছাড়াও, গরুর দুধে অন্যান্য পুষ্টি রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রোটিন। এই সমস্ত পুষ্টিগুলো শক্তিশালী আর কেউ উন্নতি করতে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি
মেয়েদের ক্ষেত্রে শরীরের ভিটামিন ডিউ ক্যালসিয়াম মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রি মেনস্টুরুয়াল সিনড্রোম হতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা ও অ্যাসিডিটি সমস্যা হলে এ ক্লাস দুধ খেয়ে নিন কিছুটা আরাম পাবেন। প্রতিদিন আমরা এমন অনেক ধরনের খাবার খায় যাওয়ার ফলে অ্যাসিডিটি হয় এবং বুক জ্বালাপোড়া করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান, প্রতিদিন দুধ পান করতে পারেন। দুধ পাকস্থলী ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর করাতেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখে
ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। আপনি হয়তো জানেন না দুধ খেলে আপনার শরীরের শক্তি সঞ্চয় হয় এবং আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সারাদিন কাজকর্মের জন্য আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমরা প্রতিদিন কত কাজে, কত সময় ব্যস্ত থাকি। আপনি যদি নিয়মিত দুধ পান করেন তাহলে এই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। কারণ গরুর দুধে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস সহ নানা ধরনের পুষ্টিগণ রয়েছে।
মানসিক চাপ দূর হয়
দুধে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। দূরে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শীতল থেকেও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারা দিনে মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন। আমরা যখন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি বা দুশ্চিন্তা করি তখন আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
আমাদের প্রতিদিন দুধ খায় তাহলে এ ক্লান্তি গুলো দূর হয়ে যাবে ফলে মন এবং শরীর সতেজ থাকবে। তাই এতে করে মানসিক চাপ দূর থাকবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
দুধের উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি দুজন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি তে ভরপুর, এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি প্রতিদিন দুধ খায় তাহলে সমস্যা কমবে বলে জানা গেছে। তবে কমফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে। তা না হলে ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
গরুর দুধের অপকারিতা
- যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই এ ধরনের রোগীর দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারে দুধ না খাওয়া।
- যাদের শরীরে "লাক্টেজ" নামক এনজাইম এর অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া।
- যাদের ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশে আলসার তথা ডিউডেনাল পালসার আছে বা যাদের "কোলেসিসটিটিস" তথা গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকা। কারণ দুধ এই ধরনের রোগীর রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
- এলার্জি থাকলে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত। কারণ এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসরা। অনেকের আবার দুধ এলার্জি আছে বলে জানা যায়।
- যাদের পেটে অপারেশন করা হয়েছে, তাদের পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দুধ খাওয়া বারণ। অর্থাৎ ঘা শুকিয়ে গেলে, তখন দুধ খাওয়া যাবে।
- যারা পাকস্থলীর আলসার তো থাক গ্যাসট্রিক আলসারের রোগী, তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। এই সকল রোগীদের দুধ খেলে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।
- শরীরের আয়রন বা লোহার অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন তাদের দুধ খাওয়া উচিত না।
অতিমাত্রায় দুধ খাওয়া উচিত না। অনেকে আছেন যাদের দুধ অনেক পছন্দ, তারা নিয়মিত দুই গ্লাসেরও বেশি দুধ খেয়ে থাকেন। প্রতিদিন নিয়ম করে ১-২ গ্লাস দুধ খেতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত দুধ খেলে উপকারের চেয়ে অপকারী বেশি হতে পারে।
লেখকের মতামত
গরুর দুধ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক দের জন্য স্বাস্থ্যের ভূমিকা রাখে। নিয়ম করে প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, শরীর ও মন সতেজ থাকে। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনার প্রয়োজনে গুরুত্ব রেখেছে। আর্টিকেলটি যদি আপনার গুরুত্ব রাখে তাহলে অবশ্যই আপনা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এই রকম আপনার অজানা তথ্য জানার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url