২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষা পদ্ধতি

ফ্রিলান্সিং এ কিভাবে আমরা তারাতারি উন্নতি করতে পারবনতুন শিক্ষা ক্রম চলে আসছে আগের মত আর কোন পরীক্ষা থাকবে না। একাদশ শ্রেণির আগে Science, Arts, Commerce এর মত বিভাগ বিভাজন থাকবে না। সাইন্সের সাবজেক্ট গুলাতে মার্ক কমে যাওয়া নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু আবির ভাব। কিছুদিন আগে ভিকারুন্নেসা স্কুলের অভিভাবক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাইছে এই নতুন শিক্ষাক্রমের।
২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষা পদ্ধতি
২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষা পদ্ধতি
কি এমন আছে শিক্ষাক্রমের মধ্যে, ক্লাসে কি আসলেই আর শিক্ষকরা পড়াবে না? শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে যাবে? আর আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে উদ্দেশ্যে এই নতুন শিক্ষা বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব? এই পুরো বিষয়টা নিয়ে আজকে আমাদের পোস্টে আলোচনা করা হবে।

ভূমিকা

একটু আপনাদের বলা দরকার, নতুন এ শিক্ষার ক্রমে কি কি জিনিস নতুন ভাবে ঢুকানো আছে। কেউ আপনাকে পড়ায়ে দিবে বা শিখায় দিবে এই কনসেপ্টা নেই বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষার্থী নিজে নিজে জিনিসগুলা শিখবে।কোন শ্রেণীর রুল থাকবে না, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান থাকবে না সবাই সমানভাবে বিবেচিত হবে।

শিক্ষক উনি হবেন একজন সহায়তাকারী সরাসরি কোন একটা জিনিস শিখায় দিবেন না বরং কি করে একটা জিনিস শিখতে হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবে।

দুইটি মূল্যায়ন যেভাবে বিবেচনা করা হয়েছে 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন হবে কিভাবে? এতদিন পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হতো এখন কিভাবে হবে? এখানে দুইটা ব্যবস্থা

➤ শিখনকালীন মূল্যায়নঃ আপনি যখন শিখতেছেন কতটুকু শিখতেছেন, আগ্রহ আছে নাকি, ক্লাসে আপনি কেমন ব্যবহার করতেছেন, দলগত কাজ আপনি কেমন করতেছেন এ বাবার গুলো মূল্যায়ন করা হবে আর এটাই বছর বাকি চলবে।
➤ সামষ্টিক মূল্যায়নঃ একটা নির্দিষ্ট সময় শেষে একজন শিক্ষার্থী কতটুকু শিক্ষা অর্জন করল এই ব্যাপারটায় এখানে মূল্যায়ন হবে। একটা হবে বছরের মধ্যভাগে ৬ মাস পরে মূল্যায়ন-১ আর আরেকটা হবে বছরের শেষে যেটা সামস্টিক মূল্যায়ন-২ সহজ বাংলায় এই সামষ্টিক মূল্যায়ন-২ আমাদের আগের পরীক্ষার একটা নামান্তর তবে হয়তো দুইটার মধ্যে বিভেদ থাকবে।

বর্তমান শিক্ষা বিষয়ে আলোচনা

তৃতীয় শ্রেণীর পর্যন্ত শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হবে এখানে কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এখানে পাঁচটি বিষয় থাকবে, এই পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন তাহলে দলগতভাবে একজন শিক্ষার্থী কতটুকু জ্ঞান অর্জন করতেছে তা পুরা বছর মিলে যে শিখনমূলক ব্যাপারটা আছে ওইটা আর বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে তার মানে পরীক্ষার মাধ্যমে।
এখানে অভিভাবকদের বেশ কিছু দুশ্চিন্তা জায়গা আছে।

পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীরা পড়তে চাচ্ছে না ওরা কিভাবে প্রস্তুতি ও নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট না থাকায় ভাস্কর পাকাইছে। যেমন এখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হচ্ছে হচ্ছে হচ্ছে আর বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন মানে বার্ষিক পরীক্ষা ওইটা সময়সূচি প্রকাশ করছে মাধ্যমিক আর উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ঘোষিত সূচি অনুযায়ী ৫ নভেম্বর থেকে এ মূল্যায়ন টা শুরু হয়েছে অভিভাবকদের অভিযোগ হচ্ছে এখনো এ মূল্যায়নের নির্দেশনা স্কুলে পাঠানো হয়নি।

 আগামী ২৯ অক্টোবর এর নির্দেশনা স্কুলে পাঠানো হবে তার মানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কেউই জানতে চায় না কিভাবে বার্ষিক মূল্যায়ন টা হবে।

শিক্ষকরা হয়তো মনগড়া মূল্যায়ন করতে পারে অভিযোগ শিক্ষকদের উপরে এখন বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে কিনা? এতদিন একটা বিষয় পড়ালে হত পরীক্ষার খাতায় আমার কাজ শেষ, এখন কিন্তু ব্যাপারটা ওইটা না নতুনভাবে শিখাইতে হচ্ছে। পুরা বছর ধরে মূল্যায়ন টা করতে হবে আপনি এখন প্রাণ প্রায় পর্যন্ত এবং গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষকরা ওদের সেই Capability আছে কিনা এই ধরনের শিখন কালীন মূল্যায়ন করা বা সারা বছর ধরে একটা এসেসমেন্ট চালানোর এ ব্যাপারটা যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছে অনেকেই।

 বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি এরপর নাম্বারের উপর পছন্দের প্রভাব কিন্তু করতে পারে। কোন শিক্ষক অনৈতিক হন তাহলে শিক্ষার্থীকে চাপে ফেলিয়ে নিজেদের কাছে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং পড়ানোর পরে শিক্ষার্থীরকে নাম্বার দেওয়া হবে এ ব্যাপারটা সামনে হইতে পারে। যেহেতু মূল্যায়নের মেইন সুতা শিক্ষকদের হাতে এর মধ্যে আরো ব্যাপার আছে।

 সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলা ওখানে সরকারি কমিটির সভাপতি থাকে, সদস্য থাকে, রাজনৈতিক নেতারা থাকে, শিক্ষকরা অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে পড়লে নিজেদের নৈতিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যারা অযোগ্য বা দুর্বল পুরো নাম্বারটা পাইনা ওই শিক্ষার্থীকে পূর্ণ নাম্বার দিতে বাধ্য থাকেন।

এছাড়া অনেক অভিভাবকরা শিক্ষকদের উপর অনেক অন্যায় ভাবে চাপ প্রয়োগ করে নিজের সন্তানকে বেশি নাম্বার দেওয়ার জন্য।এভাবে করে আমাদের শিক্ষকদের জীবন আর চাকরি কে নিরাপত্তাহীন করতেছি। যেসব শ্রেণীর শিক্ষা মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে সরকারি বৃত্তি ও সনম দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের দেশের জন্য এই শিক্ষাক্রমটা কতটুকু উপযোগী?

এখানে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন শিক্ষাক্রমকে শিক্ষার্থীদের সারা বছর মূল্যায়ন করতে হবে এটাতে শিক্ষককে অনেক বেশি পরিশ্রম দিতে হবে একটা ক্লাসে ৫০-৬০ শিক্ষার্থী থাকে তাহলে এইটা করা কতটা সম্ভব এটা একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আদর্শ মতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ :২০ কে আদর্শিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, ১ জন শিক্ষক ২০ জন শিক্ষার্থীকে দেখতে পারবে।

বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ এ শিক্ষাক্ষেত্রে ১ :৩২, একজন শিক্ষকের আন্ডারে ৩২ জন শিক্ষার্থী থাকে এটা অনেক জায়গা আরও বেশিও হয়।

আপনাদের আর একটা বিষয় জানা খুবই দরকার শিক্ষাক্রম আর শিক্ষানীতি দুইটা কিন্তু আলাদা জিনিস। আমাদের আগের শিক্ষানীতি টা অধ্যাপক কবির চৌধুরী ভ্রনিত ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি। এইটার আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২তে প্রণয়ন করা হয়েছিল আর ২০২১ সালের শিক্ষাক্রম একইভাবে ধাপে ধাপে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখন ওইটার আলোকে প্রথম, ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণীতে নতুন ভাবে পড়ানোর স্টাইল চালু হয়েছে।

আগামী বছর মানে ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম, নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম আসবে। এরপরে ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম, দশম শ্রেণীতে এটা চালু হবে। একাদশ শ্রেণীতে ২০২৬ সালে আর দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০২৭ সালে নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url