খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

যে সব খাবার খেলে শীতকালে সুস্থ থাকবেনখেজুর অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। আরব দেশে খেজুরের চাষ বেশি করা হয়। এই খেজুর ফলটি ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ চিনির বিকল্প হিসেবে এই ফলকে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
 খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন 

ভূমিকা

খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। খেজুরের ইংরেজি প্রতিশব্দ dates।এতে রয়েছে বিশেষ পুষ্টি উপাদান। এটি রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। খেজুর শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর করে।

খেজুরের প্রকারভেদ গুলো জেনে রাখুন  

খেজুর কে আরবিতে তুমুর বলা হয়।সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানাজাতের খেজুর পাওয়া যায়। এদের আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। আজওয়া সাগি,মাবরুম ,ডেইরি, মাবরুম ওয়ান্নাহ সেফরি ,মরিয়ম। মরিয়ম খেজুর দেখতে কিছুটা লালচে রংয়ের বেশ লম্বাটে হয়ে থাকে। সাফাওয়ি এই খেজুরটি বেশ নরম দেখতে গাঢ় বাদামি রঙের। সারিবিশ্বে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির খেজুর আছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে ১০০ টির বেশি প্রজাতির খেজুর পাওয়া যায়।

সাধারণত রমজান মাস থেকে শাওয়াল মাস পর্যন্ত খেজুর থাকে‌। তবে কিছু প্রজাতির খেজুর এখনো পাওয়া যাচ্ছে‌।

খেজুরের পুষ্টি উপাদান :

খেজুরের পুষ্টি উপাদান অনেক। খেজুর একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল।এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি আছে। ক্যালরি,প্রোটিন,ফাইবার আরো আছে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান। এই খেজুর মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

খেজুরের কার্যকারিতা:

খেজুর গুণাবলীতে অনন্য। এটি নানানপুষ্টি উপাদনে সমৃদ্ধ।খেজুর খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। খেজুর প্রাকৃতিক আসে পূর্ণ বলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। যারা ভিটামিন যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। এই খেজুর দুর্বল হৃদপিণ্ডকে সফল করে। হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে মহা ঔষধি হলো খেজুর। খেজুর দেহের অতিরিক্ত ওজন কমায়। বারবার ক্ষুধার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। খেজুর অল্পতেই শর্করার প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণ করেন।

খেজুর মা এর দুধের পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে দেয়।খেজুরে অনেক ক্যালসিয়াম আছে এজন্য হাড়কে শক্তিশালী করে। প্রতিদিন খেজুর খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। খেজুর বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন: জ্বর,সর্দি, ঠান্ডায় বেশ কাজ করে। দৈনিক খেজুর খেলে কোলেস্টরল রোগীদের উপকার দিয়ে থাকে।খেজুরে প্রোটিন থাকায় চুল পড়া রোধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

খেজুরের উপকারিতা:

খেজুর দেহের পুষ্টি উপাদানের মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। খেজুর বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। শুকনো খেজুর ,ভেজা খেজুর এবং আজওয়া খেজুর। শুকনো খেজুরের তুলনায় ভেজা খেজুর বেশ উপকারী।তবে এর মধ্যে অন্যতম আজওয়া। আজওয়া খেজুর দেখতে কালো ও নরম। এটি দেখতে বেশ সুস্বাদু। সৌদি আরবের মদিনায় মূলত আজওয়া খেজুর চাষ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ছয়টি খেজুর খেতে হবে।

বেশি খাওয়া যাবেনা। নিয়মিত খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এ সাথে সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। খেজুর প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। শোনা যায়, খেজুর ফুলের পরাগায়ন বন্ধ্যাত্ব দূর করে। এটি ঔষধ কোষের গুণগতমান বৃদ্ধি করে।

খেজুরের অপকারিতা:

কিছু ফল আছে সেগুলো উপকারের পাশাপাশি অপকারও রয়েছে। যাদের শরীরে রক্তের সুগার আছে।তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেজুর খাওয়া ভালো। যেহেতু খেজুর মিষ্টি জাতীয় ফল এতে করে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাদের শরীরে পটাশিয়াম থাকে ,তারা খেজুর খাওয়া হতে বিরত থাকবেন। খেজুর তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে যে কোন কিছু কম পরিমাণে খাওয়া ভালো।

কখন খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়  

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে সারা দিন শরীরে ভালো এনার্জি পাওয়া যায়। যা কাজ করার মত শক্তি যোগায়। খেজুরে যেহেতু প্রোটিন ও আয়রন আছে।তাই খেজুর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যায় ভুগছেন। তারা প্রতিদিন সকালে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়াও আপনি ইচ্ছে মতো যখন তখন খেজুর খেতে পারবেন কিন্তু সঠিক পরিমাণ মত খেতে হবে।

খেজুর রসের উপকারিতা:

খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও পুষ্টিগুণ থাকে। সাধারণত শীতকালে খেজুরের রস পাওয়া যায়।এই রস প্রায় সবার কাছেই প্রিয় সারা বছর খেজুরের রস পাওয়া গেলেও শীতকালে খেজুরের রসের জনপ্রিয়তা বেশি থাকে। শীতের সকালে খেজুরের কাঁচা রস খেতে সবাই পছন্দ করে। খিচুড়ির রস জ্বাল করে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। এই এই খেজুরের গুড় বিক্রি করে মানুষ আর্থিকভাবে উন্নতি লাভ করছে।

খেজুরের গুড় দিয়ে নানা রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। যেমন: দুধ পুলি,ভাপা,চিতই ইত্যাদি। এমনি পায়েস তৈরি করা হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। শীতকালে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো,এই আবহাওয়ায় খেজুরের রস কিংবা খেজুর গুড়ের পিঠা খেতে বেশ ভালোই লাগে।

খেজুরের রসের অপকারিতা:

শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকে। গাছিরা আবার গুড় সংগ্রহ করার পাশাপাশি খেজুরের রস বিক্রি করে থাকেন। এই খেজুরের রসের রয়েছে অনেক বড় অপকারিতা। বিকেলে সূর্য অস্তমিত হওয়ার আগ মুহূর্তে গাছিরা গাছে মাটির হাড়ি লাগিয়ে দেয়। অনেক গাছিরা সতর্ক অবলম্বনে ক্ষেত্রে হাঁড়ির মুখ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়। অনেকে হাঁড়ির মুখ খোলা অবস্থায় রাখেন।

কেননা হাঁড়ির মুখ খোলা রাখলে হাঁড়িতে বাদুর পাখি এসে বসে রস পান করতে পারে।বাদুড়ের লালা মিশ্রিত রস মানুষ পান করলে নিপা ভাইরাস হতে পারে। নিপা ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। এই ভাইরাসের আশঙ্কা দেখা দিলে প্রথম পর্যায়ে জ্বর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিবে। তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এজন্য খেজুরের রস পানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

শুকনো খেজুরের ব্যবহার:

শুকনো কিছুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুকনো খেজুর কে মৌলিক খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়।শুকনো খেজুর সাধারণত আইসক্রিম, মিল্কশেক,কেক, মিষ্টান্ন ,ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। এগুলো খাদ্য পরিমাণে খাওয়া ভালো‌। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুকনো খেজুর ডায়াবেটিস এবং এর জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। এই শুকনো খেজুর খাওয়ার ফলে পায়ের ফোলা ভাব কমতে পারে।শুকনো খেজুর টিউমারের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কার্যকলাপ হতে পারে।

শুকনো খেজুর প্লাজমা ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়া ঘনত্বের বৃদ্ধি হ্রাস করা সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ একটি খেজুর কিডনি রক্ষা করতে পারে। খেজুর নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

লেখকের মতামত

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করুন। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার ভালো লাগবে। আর এই রকম প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url