হঠাৎ করে বেশি রেগে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে তা জেনে নিন
নিজেকে পরিবর্তন করার উপায় জেনে নিনহঠাৎ করে বেশি রেগে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন কারণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যেকোনো সময় আপনার ক্ষতি হতে পারে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম, অতিরিক্ত গাড়ির হর্ন, বাসের কন্ডাকটরের আচরণ অনেক কিছুতেই ইদানীং খুব রেগে যান।মনোবিজ্ঞানীরা যদিও বলছেন রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ। কিন্তু এই রাগ ক্ষতির কারণ হয়েও দেখা দিতে পারে।
![]() |
হঠাৎ করে বেশি রেগে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে তা জেনে নিন |
তার প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে।এমনকি স্বাস্থ্যের ওপরও রাগের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যখন সেটা স্বাভাবিকের পর্যায়ে থাকবে না তখনই তা নিয়ন্ত্রণের দরকার।
ভূমিকা
কেউ যদি আক্রমণাত্মকভাবে সেটি প্রকাশ করে, মানুষজনকে আঘাত দিয়ে, অন্যকে হুমকি দিয়ে বা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে যদি কেউ রাগ প্রকাশ করে। হুট করে এমন রেগে গিয়ে খুন খারাবি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনাও শোনা যায়। নিজের রাগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন চলুন সেটা জেনে নেওয়া যাক;-
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সঠিক নিয়ম গুলো জেনে নিন
রাগ আমরা প্রতিটা মানুষই করে থাকি। রাগ যে শুধু আমাদের মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে তা না রাগ আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে। এই পোস্টে আমরা আপনাদের বিজ্ঞানভিত্তিক রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কতগুলি পদ্ধতি কথা বলব। যা ব্যবহার করে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
গভীরভাবে শ্বাস নিন
যখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে রেগে যাচ্ছেন বা গেছেন রাগে আপনার গা গরম হয়ে যাচ্ছে ন তখন আপনি শ্বাস নিয়ার এই টেকনিক টি ব্যবহার করতে পারেন। এটি যেমন আপনার মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাবে এবং আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। ১-৩ সেকেন্ড গুনে শ্বাস নিন, এরপরে ৩ সেকেন্ড নিঃশ্বাস বন্ধ রাখুন, এরপরে ৩ সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস নিন।
এ সময় যে বিষয়ে আপনি রেগে আছেন এখান থেকে মনোযোগ সরিয়ে মনে মনে সেকেন্ড গোনার দিকে খেয়াল করুন। যতক্ষণ না আপনার রাগ কমে যায় এই টেকনিকটি বারবার রিপিট করুন।
বিরতি নিন
যদি দেখেন কোন কাজ বা তর্ক আপনাকে রাগিয়ে দিচ্ছে সেখান থেকে বিরতি নিন। রাগ যখন বাড়তে থাকে তখন টিগারই বিষয়ে দূরে থাকলে তা আপনার রাগ কমাতে সাহায্য করবে। যদি কোন অফিসের কলিকের সাথে রেগে যান তাহলে পাশের রুম থেকে হেটে আসুন ৫-১০ মিনিট কাটিয়ে আবার ফিরে আসুন। যদি আপনার পরিবারের কারো সাথে তর্কা-তর্কি হয় এবং আপনি রেগে যাবে এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে মনে মনে ১-১০ পর্যন্ত গুণুন।
তারপরও যদি রাগ না কমে তাহলে যার সাথে কথা বলছেন তার কাছ থেকে সময় নিন, বলুন আমি এই ব্যাপারে একটু পরে কথা বলবো। এরকম কয়েক মিনিট বিরতি নিলে দুই পক্ষ থেকে ভাবার সুযোগ পাবেন রেগে গিয়ে ঝগড়া লাগার চেয়ে তখন গঠনমূলক ভাবার একটু সুযোগ পাবেন।
নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য আগে সমস্যা ভালো মত জানতে হয়। যদি আপনার রাগের সমস্যার সমাধান করতে হলে আপনাকে জানতে হবে কোন বিষয়গুলোর এগিয়ে দেয় সেই বিষয়গুলি মনে মনে বা কোন একটি কাগজে তালিকা করুন। এভাবে একটি তালিকা থাকলে আপনি এইসব পরিস্থিতি থেকে আপনি আগেই সচেতন থাকবেন এবং খুব সহজে আপনার আগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
হাঁটতে বের হন
যখন আপনি কোন কারণে রেগে যান তখন হাঁটতে বের হন। যখন আপনি কোন কারনে কারো উপর রেগে যাবেন তখন আপনি যদি কিছু সময়ের জন্য কোথাও থেকে হেঁটে আসেন তাহলে আপনার রাগ কমতে সাহায্য করবে। কোথা থেকে ৫ মিনিটের জন্য হিটে আসুন হাঁটতে বের হওয়া রাগ কমানোর খুব একটি কার্যকরী। খোলা হাওয়া যেমন আপনার মন ভালো করবে তেমনি প্রকৃতির ছোঁয়ায় আপনার মনে অন্যদিকে চলে যাবে। আপনি পরিষ্কার ভাবে ভাবার সুযোগ পাবেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
যাদের ক্রনিক বা অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম মানুষের শরীরে আন্ডারফি তৈরি করে যা মানুষকে উৎফুল্ল তৈরি করে শরীর ও মন থেকে রাগ কমাতে সাহায্য করে। নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন, দৌড়ান, সাই ক্লিন করুন অথবা মেডিটেশন করুন এগুলা আপনার নেগেটিভ ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
লিখে প্রকাশ করুন
কোন রাগ যদি আপনি মনে পুষে থাকেন তাহলে জমতে জমতে একসময় বিস্ফোরিত হতে পারে। এরকম জমে থাকা রাগের বিস্ফোরণে মানুষ অনেক ভয়াবহ কাজ করে থাকে। তাই যদি এমন কিছু হয় যে আপনি রেগে আছেন কিন্তু বলতে পারতেছেন না তখন তার ওপর রেগে থাকার কারণ অনুভূতি একটি চিঠিতে লিখুন। যত পারেন মনের সব রাগের প্রকাশ করুন লেখা শেষে সেটি পুড়িয়ে ফেলুন।
শেয়ার করুন বা বুঝিয়ে বলুন
যদি আপনি কারো আচরণে কষ্ট পান বা রেগে যান কারো কোন একটা বিষয় আপনাকে বিরক্ত করে অথবা ট্রিগার করে আপনি রেগে যান কিন্তু আপনি চক্ষু লজ্জায় কিছু বলতে পারেন। যদি আপনি এই রকম দীর্ঘ অবস্থায় থাকেন তাহলে তা আপনার প্রকাশ করা উচিত। রেগে গিয়ে অ্যাটাকিং মোডে কথা না বলে ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে তাকে বুঝান যে তার আচরণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। মনের ভিতরে পুষে রাখা রাগ মানুষের সম্পর্কে অনেক ক্ষতি করে তাই রাগ পুষে না রেখে তা প্রকাশ করুন।
যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমান
কথাই বলে ভোগ সর্ব রোগের ওষুধ। এই কথা যাদের অনেক রাগের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সত্যি। অপর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শরীর ও মনের ক্ষতি করে তারপর মানুষের নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। ফলে মানুষ নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে আর রেগে গিয়ে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু করে ফেলে।
পজেটিভ হওয়ার চেষ্টা করুন
রেগে গিয়ে আরেক জনকে গালি দেওয়ার চাইতে যদি ঠান্ডা মাথায় তাকে বলেন যে যে কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন সেই জিনিসটা আপনার সাথে না করতে। মানুষের সামাজিক জেদ আমাদের সবার সবাইকে দরকার শুধু মাত্র কথা কাটাকাটির জেরে একজনকে চিরজীবনের জন্য কথা বলা বা সম্পর্ক নষ্ট করা ঠিক না।
_ এরিস্টটল বলেন;-
যে কেউ রাগতে পারে, রাগা খুবই সহজ। কিন্তু সঠিক ব্যক্তির উপরে, সঠিক মাত্রা,, সঠিক সময়ে, সঠিক উদ্দেশ্যে, এবং সঠিক ভাবে রাগতে পারাটা সহজ নয় এবং সবাই তা পারে না।
তার কথা মতন বলতে হয় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপনজন ও নিজেকে কষ্ট দেওয়ার চাইতে চুপ থাকা অনেক ভালো। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য উদার হতে হয়। ভালোবাসা ভালোবাসা, আর রাগ অনেক কষ্ট ও ভাঙ্গন।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক, আমাদের নিজের রাগ নিজেদের কে নিয়ন্তণ করা খুব জরুরি। এতে আপনার অনেক ভালো হবে এবং অন্যের সাথে ঝামেলা হওয়ার থেকে বিরত থাকবেন। আশা করি এ পোস্টটি আপনার উপকারে আসছে, এই রকম আরো অনেক অজানা তথ্য জানার জন্য আমার দের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!😊
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url