শীতকালের উপকারী ফলমূল এবং সুস্থ থাকার উপায়

শীতে সর্দি কাশি থেকে দূরে থাকার উপায়শীতকালের উপকারী ফলমূল এবং সুস্থ থাকবেন কি করে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা। পৌষ আর মাঘ এই দুই মাস নিয়ে শীতকাল হয়। শীতকালে চারপাশে কুয়াশা চাদরের মোড়ানো থাকে। শীতকাল মানেই সবার কাছে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। শীতকাল বেশ উপকারী কিছু ফলমূল কিংবা শাকসবজি পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ ভালো।
শীতকালের উপকারী ফলমূল এবং সুস্থ থাকার উপায়
শীতকালের উপকারী ফলমূল এবং সুস্থ থাকার উপায়
তবে বাংলাদেশে শীতকালই শাকসবজি এবং ফলগুলোর জন্য উপকারী। এই শীতকালীন ফলমূল শাকসবজি বিশেষ করে ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ করে।

ভূমিকা

ভিটামিন ও মিনারেলের অন্যতম উৎস হলো শাকসবজি ও ফলমূল। শীতকালে আমাদের দেশি-বিদেশি ফলের সমাগম ঘটে। চলুন আমরা জেনে নেই, শীতকালীন কিছু ফল ও শাক-সবজি নাম শীতকালীন ফল: কমলা, জলপাই, আমলকি, বরই ,ডালিম, পেয়ারা, আঙ্গুর,শীতকালীন শাকসবজি, গাজর,বিন্স,ফুলকপি, টমেটো, ক্যাপসিকাম,ইত্যাদি। এই শাকসবজি ও ফলমূল খেতে যেমন ভালো, তেমনি পুষ্টিগুন অনেক।

এই ফল ও শাকসবজি যেমন খেতে ভালো কিছু ফলের ভিটামিন ও খনিজ লবণের উপস্থিতি সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করব।

শীতকালীন ফলমূল সমূহের উপকারিতা

শীতকালে ফলমূলের ঝুড়িতে হরেক রকম ফল থাকে। কমলা শীতকালীন ফল কমলায় উচ্চমাত্রায় পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভন যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী। প্রতিদিন একটি করে কমলা খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ বৃদ্ধি পায়। কমলা খারাপ কোলেস্টরল রোধ করে। ভালো কোলেস্টরেল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কমলা কোলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে ও সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের কমলা খাওয়া উপযোগী।

কমলাতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। কমলা কম পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ফাইবার থাকে। যা মেদ কমাতে সাহায্য করে। কমলা শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখে। বেশি করে কমলা খেলে ত্বক ভালো থাকে। কমলা খাওয়ার পাশাপাশি কমলার খোসারও বেশ উপকারিতা রয়েছে। কমলার সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ বেশি থাকায়, এটি উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কমলার খোসা আপনার মুখে হওয়া ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্ত করে তোলে। ত্বকে নমনীয় করে রাখতে কমলার খোসার কোন বিকল্প নেই। কমলার খোসা সংরক্ষণ করতে পারি। যেমন :একটি টাইট জারে হবে সাদা ভিনেগারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খোসা নিয়ে আমরা সংরক্ষণ করতে পারি। আমরা কমলার রসালো সাধ এবং ঘ্রাণ উপভোগ করাটা পছন্দ করি। কমলার খোসায় পলিফেনল নামের এক প্রকার উদ্ভিজ্জ উপাদান সমৃদ্ধ।

কমলার খোসা যার ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মত দীর্ঘস্থায়ী রোগ মোকাবেলা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। জলপাই এটিও একটি শীতকালীন ফল। জলপাই শুধু ফল হিসেবেই নয় জলপাইয়ের তেলও অনেক উপকারী। জলপাই এটি একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল‌। ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে রয়েছে, খাদ্য শক্তি ৭০ কিলো ক্যালরি,৯.৭ শর্করা, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। জলপাইয়ে প্রচুর পুষ্টিকর ও খনিজ উপাদান রয়েছে।

জলপাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। জলপাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কোষের সুরক্ষায় কাজ করে।জলপাইতে প্রচুর পরিমাণ আয়রনও আছে। জলপাইয়ের অলেইক এসিড থাকায় হার্টের সুরক্ষা, ত্বকের নমনীয়তা ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায়,নিয়মিত জলপাই খেলে স্মৃতিশক্তি শতকরা ২৫ ভাগ বাড়ে। জলপাইয়ে আশ ও ফাইবার দুটি বিদ্যমান চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং হজমে সাহায্য করে।

জলপাই টক স্বাদ জাতীয় ফল হওয়ায় ,জলপাই বেশ সুস্বাদু আচার তৈরি করা হয়। জলপাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এই জলপাই হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিকভাবে কাজ করে।জলপাই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলপাই আছে ভিটামিন এ যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আমলকি শীতকালীন ফল হওয়ায় এর উপস্থিতি বাজারে লক্ষ্য করা যায়। আমলকিতে ভিটামিন সি থাকে।পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজের লেবুর চেয়ে তিনগুণ ও দশ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে আমলকি গাছের পাতা ও ফল উভয়ই ঔষধ রূপে কাজ করে আমলকি স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক আমলকি রসে আছে আই নো এসিড এবং প্রোটিন যার চুলের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।

আমলকি রয়েছে নানা ভেষজ আমলকি সেদ্ধ করে ভাতের সাথে খাওয়া হয় নিয়মিত আমলকি খেলে লিভারের সমস্যা দূর হয় আমলকি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি রুক্ষতা কমে এবং শরীর ভালো থাকে আমলকি খেলে চুলের সমস্যাও দূর হয় প্রতিদিন সকালে দুই থেকে তিনটি আমলকি খালি পেটে খাওয়া ভালো আমলকি খালি পেটে খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয় এই আমলকি বমি বন্ধে কাজ করে।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আমলকির মধ্যে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুন। প্রতিদিন ২ চা চামচ করে আমলকি জুসের সাথে সমপরিমাণ মধু খেলে ঠান্ডা কাশি সমস্যা দূর হয়। আমলকি জুসের সাথে জামার করোনা মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

আবার বরইও শীতকালীন ফল। বরইয়ের মধ্যে মানবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলো আছে যথেষ্ট পরিমাণে। বর‌ইয়ের‌ বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে।যেমন:বারিকুল,বাকুল। এদের স‌্বাদ ও বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। বরইকে কুল বলা হয়ে থাকে। বরই এ ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি এর একটি অন্যতম উৎস। বরই বা কুল অত্যন্ত চমৎকার একটি রক্ত পরিস্কার ফল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী বরই সংক্রামক রোগ দূর করে।

বর‌ই হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। বরই ত্বকের টানটান ও সতেজ রাখে। পুষ্টিগত দিক থেকে বরইয়ে আছে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটো কেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায়। বর‌ই আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হাড় গঠনে এবং দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীর টক বর‌ই জন্য অত্যন্ত উপকারী।

শীতকালীন শাক সবজির উপকারিতা

শীতকালীন শাকসবজির উপকারিতা। অনেক শীতকালে বাহারি রকমের শাক সবজির দেখা পাওয়া যায়।শীতের প্রতিটি সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং আন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। তাই শরীর সুস্থ সবল রাখতে শাক সবজির কোন বিকল্প নেই। শীতকালে সবজি ফুলকপি,গাজর ,শিম,পালং শাক,মটরশুঁটি শালগম বাজারে চলে এসেছে।

গাজর শীতকালীন সবজি। গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর গাজর তরকারি বা সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। গাজরের হালুয়া বেশ মজাদার। গাজরে বিটা ক্যারোটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন আছে। যার দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। গাজর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং রোদে পোড়া ভাব দূর করে। প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আশ্চর্যজনক ভাবে বৃদ্ধি করে। কাঁচা গাজর খেলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।

গাজর ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর করে। গাজরে ভিটামিন থাকার কারণে লিভার ফাংশনে অবদান রাখে।

শীতকালে বাজারে ফুলকপির কদর থাকে। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন বি,সি ,কে ক্যালসিয়াম,আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক। ফুলকপি সবজি হিসেবে বেশ সুস্বাদু।ফুলকপি তে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ফুলকপি যকৃত থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে,শরীরকে সুস্থ রাখে। ফুলকপির কম ক্যালরিযুক্ত উচ্চমাত্রার আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় চুলকে ভালো রাখে। ফুলকপি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

শীতকালে ঘরে ঘরে পালং শাক খাওয়া হয়। পালং শাক খেতে যেমন ভালো তেমনি এর অসাধারণ গুণ রয়েছে। পালং শাকে রয়েছে কম পরিমাণ ক্যালরি। তাই ওজন বাড়ার কোনো চিন্তা নেই। বার্ধক্যকে জয় করতে পালং শাকে রয়েছে অনন্য ভূমিকা। পালন শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পালং শাকে থাকা ভিটামিন ত্বকের বাইরের আদ্রতা বজায় রাখে।পালংশাকে আয়রন থাকায় ক্লান্তি ভাব দূর করে।

মটরশুঁটি শীতকালীন সবজি। মটরশুঁটি খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। এতে কোলিন রিবোফ্লাভিনের মত যৌগ আছে। যা খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। মটরশুঁটি ফাইবারে চমৎকার উৎস।এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। মটরশুঁটি খেলে পেট পরিষ্কার ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। ফলিক এসিডের উৎস হিসেবে গর্ভবতী মায়ের মটরশুঁটি খেতে পারেন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

শীম শীত শীতকালীন সবজি। নিয়মিত সবজি খেলে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শিমে জিং, ভিটামিন সি, এবংঅন্যান্য রকম খনিজ উপাদানের সমৃদ্ধ। শিমে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। শিমে সিলিকন জাতীয় পদার্থ থাকে। যা হাড় সুগঠিত করে। মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ও এলার্জির সমস্যা প্রতিকার হিসেবে বেশ কার্যকর।

লেখক এর মতামত

নিয়মিত পানি পান করুন। বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খান। আশা করি , উপরোক্ত পোস্ট আপনার কাজে আসবে। আর এই রকম অজানা তথ্য জানার জন্য আমাদের পাশেই থাকুন। ধন্যবাদ!☺

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url