১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস
ডিসেম্বর মাসের দিবস ও ছুটি সমূহ ২০২৩ । Days of December 2023বিগত শতাব্দী ধরে ১৬ই ডিসেম্বর তারিখটি বাংলাদেশ ও ভারতে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষ নদীর স্রোতের মতো নিরন্তন সত্যের পথ ধরে ১৯৭১সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার কাঙ্খিত সূর্যকে।
![]() |
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। 16 december Victory Day |
এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালোবাসার সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসা টুকু হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্য। যার কখনো নিজের মাতৃভূমির জন্য ভালোবাসাটুকু অনুভব করেনি তাদের মত দুর্ভাগা আর কেউ নেই।আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির জন্য যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস।
বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছে।আমাদের বিজয়ের দিন যে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তাই বিজয় একটি সংগ্রামবদ্ধ অধিকার।
ভূমিকা
পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতির জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যায় স্মৃতি কোনদিন ভোলা যায় না। আমাদের জাতীয় জীবনে তেমনি একটি স্মৃতিময় অমলিন বিজয়ের দিন। ৯ মাস রক্তক্ষয় যুদ্ধের পর এদিনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছিল। দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদায় পালন করা হয় এবং একটি সরকারি ছুটির দিন।
বিজয় শুধু একটি শব্দ নয়, শিহরণ- সবার কাছে, সব সময়। তাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময় একটি দিন মহান বিজয় দিবস।
মহান বিজয় দিবসের পটভূমি
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে বিপুল ত্যাগ ও সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসের এক গৌরবময় মাইলফলক মহান ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতীয়তা ভিত্তিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। দীর্ঘ ২ শতক ধরে চলে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী জঙ্গি বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম। পাকিস্তানের জনসংলগ্ন থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালীদের নিয়ে।
সমগ্র পাকিস্তানের বাঙালিরা বেশি হলেও তাদের ভাষাকে বাদ দিয়ে, সংখ্যা লঘু মানুষের ভাষা উর্দু আর ইংরেজিকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালে দুয়ে মার্চ ঢাকায় ফজলুল হক মুসলিম হলে এক সবাই বাংলা ভাষার পক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে রফিক জব্বার সালাম বরকত সহ আরো অনেকে শহীদ হন। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ১৯৬৬ সালে স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ১৯৬৮ সালে শাসকগোষ্ঠী আগরতলা মামলা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠায়। শুরু হয় গণআন্দোলন।
সারাদেশে গণ আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানে রূপ নিলে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। আলোচনায় নামে অযথা সময়ই ক্ষেপণ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনে ডাক দিয়ে বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর। জঘন্যতম হত্যাকান্ড চালায়। ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১০ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর ১৭ই এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হানির ও লক্ষ্য কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়।
মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য
আমরাই এ বিজয় লাভ করেছি দখলদার পাকবাহিনীকে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে পরাজিত করে। এদিন অগ্নি অক্ষরে,লেখা বুকের পাঁজরে আঁকা। এদিন অশ্রু সাগরে গড়া। স্বামীহারা স্ত্রীর চিৎকার, সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ, লক্ষ শহীদের রক্ত স্রোত আর স্বজনের লাশে লাশে গড়া এ বিজয় দিবস। আমাদের স্বাধীনতা আমরা ৩০ লক্ষ শহীদের কাছে ঋণী।এর ঋণ শোধ হবার নয়। এদিন এই মুক্ত হয়েছিল আমাদের বহু প্রত্যাশিত স্বাধীনতার সূর্য। সে এক করুন ইতিহাস।
শূন্যতা অজস্র মৃত্যুর স্তূপে একটি জন্মের সংবাদ। এই বিজয় বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন চিত্র। এ স্বাধীনতা তাই শুধু একটি নাম নয়-একটি রক্তজবা, একটি লাল গোলাপ, একগুচ্ছ রক্ত কোমল। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল একটি শোষক সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিজয় অর্জন করা যত কঠিন, বিজয়ের গৌরব কে ধরে রাখা তার চেয়ে আরও বেশি কঠিন। মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছিলেন, তাদের স্বপ্ন আশা বাস্তবায়িত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক মুক্তি এবং স্বাধীনতা পেয়েছি বটে, প্রকৃত পক্ষে পরিপূর্ণ বিজয় আমাদের এখনো আসেনি। এদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আজ পঙ্গু,অসহায়। রোগ ব্যাধিতে ভোগে, বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে অর্ধ হারে মারা গেছেন। দেশের দরিদ্র, বিপন্ন লোকজন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকেরা কাজ করেও তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। বিজয় দিবসের দাবি এসব মানুষের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করা।
এই বিজয়ের সুবাদেই আমরা আজ অনেকেই নানা ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয় ছাড়া আমাদের সাফল্য ছিল সুদূর পরাহত। কাজেই আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।
পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙ্গালীদের কাছে আত্মসমর্পণ
মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকা ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান করল। গভর্নর হাউজে বোমা ফেলার কারণে তখন গভর্নর মালিক আর তার মন্ত্রীরা পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমান শেরাটনে) আশ্রয় নিয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী ঢাকা সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ লিফলেট ফেলেছে, সেখানে লেখা মুক্তিবাহিনী হাতে ধরা পরার আগে বা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করো।
ঢাকার পরম পরাক্রমশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তখন আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিল। আত্মসমর্পণের দলিলে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করার কথাটি লিখে একজন পাকিস্তানি জেনারেল দুর্বল ভাবে একবার সেখান থেকে বাংলাদেশের নামটি সরানোর প্রস্তাব করেছিল কিন্তু কেউ তার কথাকে গুরুত্ব দিলো না, ইতিহাসে সত্যকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই!
১৬ ই ডিসেম্বর বিকেলবেলা রেসকোর্স ময়দানে হাজার হাজার মানুষের সামনে জেনারেল মিয়াজি আত্মসমর্পণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি থেকে মাথা নিচু করে বিদায় নেওয়ার দলিলের স্বাক্ষর করল। যে বিজয়ের জন্য এই দেশের মানুষ সুদীর্ঘ ৯ মাস অপেক্ষা করছিল সেই বিজয়টি এই দেশের স্বজন হারানোর সাত কোটি মানুষের হাতে এসে ধরা দিল। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায় পাকিস্তানের সব সৈন্য আত্মসমর্পণ করে শেষ করতে করতে ডিসেম্বরের বাইশ তারিখ হয়ে গেল।
মহান বিজয় দিবস অর্জন
কালো রাত্রির অবসান ঘটিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে আনলো নতুন সূর্য। বন্যার বেগে এলো বিজয়। দখলদার বাহিনী এবং তাবেদার গুষ্টি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। স্বাধীনতা,দখলদার বাহিনীর করুণ আত্মসমর্পণের দৃশ্য দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ সেদিন উদ্যান বর্তমান (রেসকোর্স ময়দানে) ভিড় করল। দখলদার পাক বাহিনীর সর্বাধিক নায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি অবনত মস্তকে মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন। বিকেল পাঁচটা এক মিনিটের সময় আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হলো।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাক বাহিনীর মাথা নত করল। দখলদার বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি য়াজি এবং রাও ফরমান আলী সহ ৯০ হাজার সৈনে্্যর এক বিরাট বাহিনী যুদ্ধবন্দী হলো। এভাবে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ হয়। জাতীয় জীবনে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত হলো।
মহান বিজয় দিবস ও বর্তমান বাস্তবতা
শোষণ মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবের আঘাত আজ ছিন্নভিন্ন। গণতন্ত্র এখন সংকটের আপত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখন স্বপ্ন বিলাসিতা। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়েছে পরিত্যক্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় সে জাতি ঐক্য করে উঠেছিল তা বিভেদ ও সংঘাতে পর্যবসিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিজয় দিবস এখনো আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
বিজয়ের আনন্দে দুঃখের হাহাকার
পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করার পর বিজয়ের অবিশ্বাস আনন্দ উপভোগ করার আগেই একটি ভয়ঙ্কর তথ্য বাংলাদেশের সকলকে স্তম্ভিত করে দিল। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যখন সবাই বুঝে গেছে এই যুদ্ধ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, সত্যি সত্যি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে নিজের স্থান করে নিচ্ছে, তখন এই দেশের বিশ্বাসঘাতকের দল আল বদর বাহিনী দেশের প্রায় ৩ শত শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীদের ধরে নিয়ে যায়।
তাদের উদ্ধার করার জন্য দেশের মানুষ যখন পাগলের মত হন্যে নেই হয়ে খুঁজছে তখন তাদের ক্ষতবিক্ষত মানব দেহ রায়ের বাজার বদ্ধভূমি এবং অন্যান্য জায়গায় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকলো। দেশটি যদি সত্যি সত্যি স্বাধীন হয়ে যায় তারপরেও যেন কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেই ব্যাপারটি এই বিশ্বাসঘাতকের দল নিশ্চিত করে যাওয়ার জন্য এই দেশের সোনার সন্তানদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত আল বদর বাহিনীতে ছিল জামাতে ইসলাম ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চৌধুরী মঈনউদ্দিন, আশরাফুজ্জামান খান, মতিউর রহমান নিজামী, (পূর্ব পাকিস্তান আর বদর বাহিনীর সর্বাধিক নায়ক) এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (পূর্ব পাকিস্তান বদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় সংগঠক)।
আমাদের অহংকার
আমাদের মাতৃভূমির যে মাটিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, ওপারে তাকালে যে আকাশ আমরা দেখতে পাই কিংবা নিঃশ্বাসে যে বাতাস আমরা বুকের ভেতর টেনে নেই, তার সবকিছুর জন্যই আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঋণী। সেই দিন বাঙালি জাতি কখনোই শোধ করতে পারবেনা, বাঙালি কেবল তাদের কৃতজ্ঞতা টুকু প্রকাশ করার একটুখানি সুযোগ পেয়েছে তাদের বীরত্বসূচক পদক দিয়ে সম্মানিত করে।পুরস্কার প্রাপ্তদের মাঝে সাতজন হচ্ছেন মরণোত্তরে সবচেয়ে বড় পদপ্রাপ্ত বীরশ্রেষ্ঠ।
তারা হচ্ছেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, হামিদুর রহমান, মুন্সি আব্দুর রউফ, রুহুল আমিন, মতিউর রহমান এবং নুর মোহাম্মদ শেখ। এদের মাঝে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহা বশেষ ছিল পাকিস্তানে এবং বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহা বশেষ ছিল ভারতে। তাদের দুজনের দেহাবষেশই এখন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অন্য বীরশ্রেষ্ঠ এবং অসংখ্য শহীদদের মুক্তিযোদ্ধার সাথে সাথে তাদের দুজনকেও এখন গভীর মমতায় আলিঙ্গন করে আছে আমাদের মাতৃভূমির মাটি।
১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদান রাখার জন্য যাদের বীরত্বসূচক পদক দেওয়া হয়, তাদের মাঝে নারী মুক্তিযোদ্ধারাও আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দেশের নারীরা শুধু চেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্য ও সহায়তা করেছেন তা নয়, অস্ত্র হাতে পুরুষদের পাশাপাশি তারাও যুদ্ধ করেছেন।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন
প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় মর্যাদার সাথে বাংলাদেশ বিজয়ী দিবস উদযাপিত হয়। এটি সরকারি ছুটির দিন। এদিনে রাজধানী সহ আরো অনেক শহরকে সাজানো হয় নানা রঙের আলোকসজ্জা দিয়ে। সরকারি ,আধা সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলোতে জাতীয় পতাকা উড়ানো থাকে। জেলা শহর গুলো সেজে ওঠে বিজয়ের আনন্দে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। নানাস্থানে হয় আলোচনা অনুষ্ঠান।
কোন কোন বিদ্যালয়ে নানা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করা হয়। এই দিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিবিদ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ উপভোগ করেন। খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়। আবাসিক ভবন গুলোতেও জাতীয় পতাকা উড়ে। মনে হয় পতাকাটি ও যেন বিজয়ের আনন্দে গর্বিত।এমনিভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়।
উপসংহার
১৬ই ডিসেম্বর চির প্রদীপ্ত একটি মহিমান্বিত দিন। বিজয়ের দিনে অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে রচনা করতে হবে সমৃদ্ধির ইতিহাস। স্বাধীনতার ফল প্রতিটি বাংলাদেশী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, দেশ থেকে দুর্নীতি, বৈষম্য, শোষণ নির্মূল করতে হবে। শহীদদের মহান আত্মত্যাগের এই দিনটি যেমন তাৎপর্যপূর্ণ তেমনি দিনটি সত্য উন্নয়নের পথে মাথা তুলে দাঁড়াবারও দিন। নৈতিক অবক্ষয় আমাদের রোধ করতে হবে। দেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করার পক্ষে এদিনে আমাদেরকে নতুন করে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
লেখকের মতামত
আমাদের দুঃখী দেশটি আমাদের বড় ভালোবাসার দেশ, বড় মায়া মমতার দেশ। যারা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের এনে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আশা করি, উপরের 16ই ডিসেম্বর সম্পর্কিত রচনাটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ!
ব্রোক্লিন৬৯ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url